চাপে রয়েছেন সেরাম সিইও আদর পুনাওয়ালা। জোগানের অভাবে ভারতে টিকার সঙ্কট চরমে। ভারতে করোনা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। চারদিকে শুধু টিকার জন্য হাহাকার। যার জেরে চাপ গিয়ে পড়ছে কোভিশিল্ডের নির্মাতা সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদর পুনাওয়ালার ওপরে।
টিকা সরবরাহে চাপ ও হুমকির ভয়ে ভারত ছেড়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটির টিকা প্রস্তুতকারক সংস্থা সিরামের সিইও আদর পুনাওয়ালা। গোটা ভারত যখন করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দিশেহারা, ঠিক সেই সময়েই এমন চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য টাইমস’। এর ফলে ভারত থেকে টিকা পাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের অনিশ্চয়তা জোরদার হল আরও। জানা যায়, লন্ডনের মেফেয়ার এলাকায় ২৫ হাজার স্কয়ার ফুটের বাড়ি ভাড়া করে থাকছেন আদর পুনাওয়ালা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্য ৫৮ লাখ টাকার বেশি।
কেন পালালেন আদর পুনাওয়ালা?
সূত্র মতে, ভারতের টিকা প্রস্তুতকারক এই সংস্থাটির সিইও আদর পুনাওয়ালার ওপর ক্রমেই বাড়ছিল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা সরবরাহের চাপ। বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে কর্পোরেট হাউজের কর্মকর্তারাসহ প্রত্যেকেই তার কাছে টিকা সরবরাহের দাবি করে আসছিলেন। এমনকি অনেকেই তাকে টিকা সরবরাহের জন্য হুমকিও দিয়েছেন।
টাইমসের সাথে সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘হুমকি বললে কম বলা হয়। মানুষের আশা এবং আগ্রাসনের শেষ নেই। এটা আশ্চর্যজনক। প্রত্যেকেই মনে করছেন, তার টিকা পাওয়া উচিত। তারা এটা বুঝতে চাইছেন না, এমন অনেকে আছে যাদের কিনা অন্যদের আগে টিকা পাওয়া উচিত।’
পুনাওয়ালা আরও বলেন, ‘তারা বলছেন, আপনি যদি টিকা না দেন তা হলে ফল ভাল হবে না। এটা খারাপ ভাষা নয়। কিন্তু বলার ধরনটা খারাপ। তাদের কথা না শুনলে তারা কী করতে পারে এটার ইঙ্গিত তারা দিয়েছেন। এমন হুমকি আসছেই এবং তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনও কাজই করতে দিচ্ছে না।’
কতদিন ব্রিটেনে থাকবেন সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি দীর্ঘ সময় লন্ডনে থাকছি। ভারতে এই পরিস্থিতিতে আর ফিরে যেতে চাই না। সবকিছুর দায় আমার উপর কিন্তু আমি একা কিছুই করতে পারব না। আমি ভাবতেও পারছি না ওদের ব্যক্তিগত প্রয়োজন না মেটালে ওরা কতদূর কী করতে পারে!’
সরকারি আধিকারিকদের মতে, প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দে’য়া হয়েছে আদরকে। সেই কারণেই ওয়াই ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দে’য়া হয়েছিল। ভারতের যে জায়গাতেই আদর যান তার সঙ্গে ৪-৫ জন সশস্ত্র বাহিনী থাকত।
ভারতের বাইরেও তৈরি হবে কোভিশিল্ড
সূত্র জতে, ব্রিটেনেও কোভিশিল্ড তৈরি হতে পারে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এব্যাপারে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও। এবছরের শুরুতে কোভিশিল্ডকে অনুমোদন দে’য়া হয়। তারপর থেকে ভারত থেকে বিশ্বের ৬৮ টি দেশে কোভিশিল্ড রপ্তানি করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর খবর অনুযায়ী, লন্ডনে কোভিশিল্ড তৈরিতে যুক্ত অংশীদারদের সঙ্গে খুব ভাল আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, পুনেতে কোভিশিল্ড তৈরি পুরো দমে চলছে। সেক্ষেত্রে সিরামের সিইও জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তিনি ভারতে ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করবেন।
বাংলাদেশের কেনা টিকার ডোজ নিয়ে সংশয়
সিরামের সিইও আদর পুনাওয়ালার এই দেশ ত্যাগে বাংলাদেশের প্রাপ্ত টিকার ডোজ পাওয়া নিয়ে সংশয় আরও বাড়ল। সূত্র মতে, বেসরকারি কোম্পানি বেক্সিমকোর মাধ্যমে সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছিল সরকার। গত নভেম্বরে সম্পাদিত ওই চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশে প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ করে টিকা আসার কথা ছিল।
এরপর জানুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে প্রায় এক হাজার তিনশ কোটি টাকায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উৎপাদিত তিন কোটি ডোজ টিকা সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে কেনার অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি।
কিন্তু বাস্তবতা হলো গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে চুক্তির পর সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে দু’টি চালানে এ পর্যন্ত মাত্র ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ।এরপর থেকে ৩২ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে এলেও চুক্তি অনুযায়ী আর কোন টিকা পায়নি বাংলাদেশ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫২০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ