আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে সম্পূর্ণ লকডাউনে যাচ্ছে তুরস্ক। নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে এ লকডাউন আরোপ করা হচ্ছে। এটি আগামী ১৭ মে পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। সোমবার এক ঘোষণায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢাকার কথা প্রথম বলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন সেই যুক্তরাষ্ট্রেই কভিড-১৯ টিকা নেয়া নাগরিকদের মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিতে স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
লকডাউনে যাচ্ছে তুরস্ক
৮ কোটি ৪০ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দৈনিক সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩৫০-এর কাছাকাছি হয়েছে, যা গত বছরে হওয়া আগের দুই স্পাইকের চেয়ে বেশি। সোমবার তুরস্কে নতুন করে আরও ৩৭ হাজার ৩১২ জন সংক্রমিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। নতুন সংক্রমণের দিক থেকে এই সংখ্যা ইউরোপে সর্বাধিক। তবে দেশটিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষের সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে চলতি মাসের শুরুর দিকে। সে সময় প্রায় ৬০ হাজার সংক্রমতি হয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
বুধবার এরদোগান টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে দিনে পাঁচ হাজারের নীচে নামিয়ে আনতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তুরস্ক একটি সম্পূর্ণ লকডাউনে প্রবেশ করবে, যাতে লোকদের কোনও বৈধ কারণ ছাড়া বাড়ির ভিতরে থাকতে হবে এবং সমস্ত অপ্রয়োজনীয় ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রাখতে হবে। অঞ্চলগুলির মধ্যে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ থাকবে এবং সুপারমার্কেটগুলি প্রথমবারের মতো রোববারও বন্ধ থাকবে।
এরদোগান বলেন, ইউরোপ যখন ধাপে ধাপে সবকিছু খোলার দিকে আগাচ্ছে তখন আমাদের এখানে সংক্রমণের হার ৫ হাজারের নিচে নামিয়ে আনতে হবে যদি আমরাও সবকিছু চালু করতে চাই। অন্যথায় পর্যটন থেকে শুরু করে বাণিজ্য ও শিক্ষাসহ সবকিছুতে আমাদেরকে অনেক লোকসান গুণতে হবে।তিনি আরও বলেন, আমাদের কাঙ্খিত লক্ষমাত্রা পূরণে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা হবে।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ নতুন করে বৃদ্ধিতে দুই সপ্তাহ আগে সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত নৈশকালীন কারফিউ ঘোষণা করেছিল তুরস্ক। কিন্তু মহামারী নিয়ন্ত্রণে তা ততটা কার্যকর প্রমাণিত না হওয়ায় কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
মাষ্ক ছাড়া বাহিরে বের হবার অনুমতি
এদিকে পরিচয় প্রকাশ না করে একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, শিগগিরই রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রগুলিতে নতুন নির্দেশনা জারি করবেন। তখন ভ্যাকসিন নেওয়াদের মাস্ক ছাড়া বাইরে যাওয়ার সুযোগের এই ঘোষণা আসতে পারে।
এমাসের শুরুতে দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনের একটি ব্লগে বলা হয় ব্রিগ্রাম অ্যান্ড ওমেন হসপিটালের সংক্রামক রোগ বিভাগের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর পল সাকসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মহামারীর বিধিনিষেধ সংক্রান্ত লিখিত আদেশ বাতিলের সময় এসেছে কি না? তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটাই ভালো হবে, যখন জনস্বাস্থ্যের আদেশ জারি হয় তারা বিজ্ঞানকে অসুনরণ করে তা জারি করে। এখন প্রমাণিত হয়েছে, মানুষজন যখন বাইরে বের হয় তখন সংক্রমণের ঘটনা ঘটে না।’
তবে তিনি এখনো যারা টিকা নেননি তাদের মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে টিকা নেননি এমন মানুষের মুখোমুখি হওয়া এবং জনাকীর্ণ স্থানে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। পল স্যাকস আরো বলেন, ‘খুব শিগগিরই করোনা চলে যাবে এমনটা ভাবার সুযোগ নেই। বরং আমাদের করোনার সঙ্গে সহজে বসবাসের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। আপনি মাস্ক না পরেও বাইরে যেতে পারবেন, বিষয়টা এমন হতে পারে।’
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারী বিশেষজ্ঞ মার্ক লিপস্টিচ পল স্যাকসের এই কথাকে সমর্থন দিয়ে টুইট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক পরিধান ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া লাভের কোনো প্রমাণ নেই।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ