
হেফাজতে ইসলামের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। একইসাথে হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির মাওলানা আল্লামা আহমদ শফীকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে জুনায়েদ বাবুনগরীর বাসায় বৈঠক হয়েছিল বলেও মামুনুল হক পুলিশকে জানিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার(২৭ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, হেফাজতে ইসলামের অর্থের যোগানদাতা ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ওই ৩১৩ জনের অর্থায়নের উদ্দেশ্য কী মাদ্রাসার উন্নয়নই ছিল নাকি আরও কোনো কিছু ছিল তাও যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে অসঙ্গতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতা মামুনুল হকের দুটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘তার ওই দুটি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।’
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর ছেলের বিয়েতেই সাবেক আমির আল্লামা শফীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হয়। ওই বিয়ের অনুষ্ঠানে মামুনুল হক, জুনায়েদ আল হাবিবসহ কয়েকজন নেতার বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আল্লামা শফীকে সরিয়ে বাবুনগরীকে আমির করার পরিকল্পনা করা হয়।
২৬ মার্চ থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক সহিংসতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের সংশ্লিষ্ট নেতাদের পর্যায়ক্রমে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সম্প্রতি নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ সারাদেশে বেশ কিছু মামলা রুজু হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় মোট ৫৩টি মামলা দায়ের হয়। মোট ৬৪টি মামলা তদন্তাধীন আছে। এ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের ১৬ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি। এরই মধ্যে রোববার (২৫ এপ্রিল) হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া মাদরাসা থেকে মামুনুল হককে গ্রেফতার করা হয়। ১৯ এপ্রিল তাকে একটি মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করে অন্য দুই মামলায় আরো ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে পুলিশ জানায়, সম্প্রতি গ্রেফতার হওয়া হেফাজত নেতাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানের ‘তেহেরিক-ই-লাব্বায়িক’ নামে সংগঠনের আদলে তারা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশকে গঠন করে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো এ দেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৫ সালে পাকিস্তান সফরের সময় মামুনুল ও তার শ্যালক নিয়ামাতুল্লাহ ওই জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ওই সময়ে এই দুজন পাকিস্তানে প্রায় ৪৫ দিন অবস্থান করেন এবং একটি রাজনৈতিক দলের কাঠামো সংগ্রহ করেন। যেটি মামুনুল পরে হেফাজতে প্রয়োগের চেষ্টা করেন।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। কদিন আগে নারায়ণগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ আটক হওয়ার পর তাকে নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। মামুনুল অবশ্য দাবি করেছেন, তার সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ