পড়াশোনার খরচ চালাতে বাসের টিকিট বিক্রি করতেন একসময়। এরপর যুক্ত হন মাদক ব্যবসায়। হয়ে ওঠেন এলাকার নিয়ন্ত্রক। রাজধানী সংলগ্ন শিল্পনগরী টঙ্গীর ব্যবসায়ীরা এক নামেই চেনেন রেজাউল করিমকে (৩২)।
রেজাউল করিম একাধারে টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদকও।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে ফুটপাত ও ঝুট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়ার। এখন টঙ্গীতে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি চার বছরে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন।
রেজাউলের বিরুদ্ধে সাবেক টঙ্গী মডেল থানায় ফেনসিডিল ব্যবসার অভিযোগে মামলাও হয়েছে। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি।
মাদক ব্যবসার শুরু
সূত্র মতে, ২০০৭ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখার খরচ জোগাতে রেজাউল করিম বাসের টিকিট কাউন্টারে কাজ নেন। টিকিট বিক্রি করতেন তিনি। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে রেজাউলের এই সংগ্রাম অনেকেরই নজর কেড়েছিল। তবে পাশে দাঁড়াননি কেউ। তখনই মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন।
টিকিট বিক্রির পাশাপাশি ফেনসিডিলও বিক্রি শুরু করেন। হাতে টাকা আসতে থাকলে একের পর এক দরজা খুলে যায়। গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে টঙ্গী সরকারি কলেজের সাধারণ সম্পাদক হন।
এরপর টিকিট বেচা বাদ দিয়ে কেবলই মাদক বিক্রি শুরু করেন। খুচরা মাদক বিক্রেতা থেকে এখন তিনি টঙ্গী এলাকার ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
ছাত্রলীগে রেজাউল
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সাবেক টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফি আহমেদের হাত ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন রেজাউল। নেতাদের ছায়ার তলে ফেনসিডিল ব্যবসা করতেন। ওই সময় তিনি বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ফেনসিডিল এনে খুচরা হিসেবে বেচতেন বলে অভিযোগ।
২০১৬ সালে টঙ্গী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। পদ পেতেও তাকে বেশ টাকাপয়সা খরচ করতে হয়েছে বলে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা জানান। ছাত্রত্ব নেই অনেক দিন। তবু ছাত্রলীগের পদ ধরে রেখেছেন।
২০১৬ সালে রেজাউল ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার পর ফেনসিডিল ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন ইয়াবা ব্যবসা। টেকনাফ ও কক্সবাজার থেকে নিজের পরিচয় দিয়ে ও নিজের গাড়ি দিয়েও তিনি ইয়াবা নিয়ে আসতেন বলে অভিযোগ। মাত্র চার বছরে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন। ভাড়া বাসা ছেড়ে উঠেছেন কোটি টাকা মূল্যের নিজের বহুতল ভবনে। ইয়াবা ব্যবসা করে দত্তপাড়া হাফিজউদ্দিন সরকার রোডে চার কাঠার একটি জমিও কিনেছেন। সেখানে প্রতি কাঠা জমির মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া দত্তপাড়া সাইদ মৃধা রোডে রয়েছে তিন কাঠার একটি প্লট। সেখানে একটি আধা পাকা বাড়িও করেছেন। টঙ্গী পশ্চিম থানা রোডে আছে জমি দখল করার ঘটনাও। পরিবহন খাতেও বিনিয়োগ করেছেন।
ওসিকে দিয়ে যা খুশি তাই করাতেন
সূত্র মতে, ছাত্রলীগের টঙ্গী কলেজের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুবাদে পুলিশ ও নেতাদের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
সম্প্রতি টঙ্গীর মরকুন এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সাইদা বেগমের সঙ্গে রেজাউলের একটি ফোনালাপ প্রকাশ পায়।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপে রেজাউলকে বলতে শোনা যায়, টঙ্গী পূর্ব থানার সাবেক ওসিকে দিয়ে তিনি যা খুশি তাই করাতেন। যাকে খুশি তাকেই গ্রেপ্তার করাতেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি শাহ আলমের সঙ্গেও রেজাউলের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি শাহ আলম বলেন, ‘অনেক দিন আগে টঙ্গী সরকারি কলেজের একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আর কলেজের সম্পাদক যেহেতু রেজাউল, তাই তাঁর সঙ্গে ওই সময় ছবিটি তোলা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে আমার মতো আরও অনেকেই ছিল।’
এসডব্নিউ/এসএস/১৭২৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ