মীর মোনাজ হক
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আদি পিতা হিসেবে যে তিন জন বিজ্ঞানীর নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন, ম্যাক্স প্লাঙ্ক, ওয়ার্নার হাইসেনবার্গ এবং এরউইন শ্রোডিঙ্গার। এঁরা তিনজনই জার্মান বিজ্ঞানী। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তাঁদের জন্ম। আজ তাদেরই একজন ম্যাক্স প্লাঙ্ক’কে নিয়ে একটু আলোচনা করবো, তার কারনও আছে।
বার্লিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সময় আমার এক প্রফেসর ডঃ লেহম্যান ‘ম্যাক্স প্লাঙ্কের ধ্রব’ বা Planck’s Constant ‘h’ এমন সুন্দর করে বুঝিয়েছিলেন যা এতো বছর পরে এখনো মনে আছে।
ধরুন, কোন স্থানে (A) একটি ঘটনা ঘটেছে এর ফলে অন্য একটি স্থানে (B) তে তার প্রভাব ফেলছে, তাহলে এ এবং বি এর মধ্যে কিছু ধরণের সংক্রমণ অবশ্যই থাকতে হবে (বিজ্ঞান ছাড়াও রাজনীতি ও সমাজনীতি তে এমন ঘটনার নজিরও আছে) বিশেষ করে, কিছু সময় বিলম্ব হলেও পরিবর্তন হতেই হবে, কারণ একই প্রভাব এক সঙ্গে একযোগে ঘটতে পারে না। এবং এটিই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের একটি সেতুবন্ধন: কোয়ান্টাম মেকানিক্স অ-স্থানীয় দৃশ্যত, কোনো দূরত্ব ছাড়াই অসীম স্বল্প সময়ের মধ্যে কোনও সংক্রমণ ছাড়াই এর প্রকৃয়াগুলিও প্রভাব ফেলতে পারে।
এটিকেই “আপেক্ষিকীকরণ” বলাহয়, যা আইনস্টাইন পরবর্তীতে তাঁর রিলেটিভিটি থিওরী তে আরো স্পস্ট করেছেন। ম্যাক্স প্লাঙ্ক এর আপেক্ষিকীকরণ থিওরী আমাদেকে কোনো অবস্থাতেই “অযৌক্তিক” বলে মনে হচ্ছে না।
আরো একটু সহজ করে বলিঃ ধরুন আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন আর গাড়ির স্পিডের আচরণ কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছে। এক্সেলেটরে চাপ দিলেন স্পিড ক্রমাগত এক এক করে বাড়ছে না। বরং হঠাৎ হঠাৎ ১০/ ১৫/২০ হারে বাড়ছে, এটাকেই একভাবে বলা হয় কোয়ান্টাম স্পিড। উদ্বেগের বিষয় বটে হয়তো ভাববেন কোয়ান্টাম মেকানিকস এর জগৎ এতো সহজ? প্লাঙ্ক দেখলেন স্পিড (গতি) লাফায়ে লাফায়ে বাড়ছে কমছে কেন? স্পিড তো নিরবচ্ছিন্ন হওয়ার কথা। তাহলে কি স্পিড খন্ডায়িত?
প্লাঙ্ক অবাক হলেন এবং তিনি অত্যন্ত বিব্রতও ছিলেন এ ঘটনায়। কারণ শক্তির পূর্ণ গুণিতক হলে তো আর শক্তি নিরবিচ্ছিন্ন থাকে না। শক্তি হয়ে যায় বিচ্ছিন্ন। এটাতো আমাদের সাধারণ জাগতিক জীবনের সাথে খাপ খায় না। আমরা দেখি জলের ধারা বিচ্ছিন্ন। একটা গাড়ি যে কোন স্পিড অর্জন করছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। আমাদের গাড়ি চালানোর স্পীডও দেখছি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাড়ছে। নিরবচ্ছিন্নর উল্টো ধারণা হলো খন্ডায়ন, বা কোয়ান্টানাইজেশন।অণুর ক্ষেত্রে শক্তির যে এই সুনির্দিষ্ট কিছু বৈধ মান থাকাই হলো শক্তির কোয়ান্টানাইজেশন।
এবার আর একটি উদাহারন দেই, ম্যাক্স প্লাঙ্ক’কের ভাষায় এভাবে বলা যায় যে, লোহা বা যে কোনো মেটাল আগুনে তাপ দিলে তা গরম হয়ে লাল রঙের আলো ছড়ায়। এটি কামারদের কামারশালায় আমরা অনেকবার দেখেছি। তাপমাত্রা বাড়াতে বাড়াতে তা একসময় আলো লাল থেকে সাদা বিকিরণ ছড়ায়। বিজ্ঞানী ম্যাক্স প্লাঙ্ক একসময় কাজ করছিলেন উত্তপ্ত বস্তু নিয়ে। উত্তপ্ত কোন বস্তু থেকে বিভিন্ন রঙের অর্থাৎ বিভিন্ন কম্পনের যে আলো (বিকিরণ) বের হয়, তার তীব্রতা নির্ণয়ের একটা সমীকরণ তিনি বের করলেন। এই সমীকরণ কে বলা হয় ‘প্লাঙ্ক সমীকরণ’ (E=hv) তিনি এটিও বললেন যে, একেক বস্তুর ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন অণুর কম্পনও নির্দিষ্ট থাকে। তাই তাঁর আবিস্কৃত ‘ধ্রব’ সংখ্যা h নির্নয় করা যাবে
E=অণুর নির্দিষ্ট শক্তি
v=গতির সমন্বিত থেকে
এবং এই সমীকরণ দিয়েই প্লাঙ্ক বিখ্যাত হয়ে গেলেন – তার জন্য তিনি নোবেল পুরষ্কারও পেয়ে গেলেন ১৯১৭ সালে। আমরা প্লাঙ্ক এর সেই অঙ্কের সমীকরণে যাবো না, কিন্ত ঐ সমীকরণ আসলে কি বলে তা আমরা জানতে পারি। তার আগে কিছু সাধারণ ধারণা আমরা দেখতে পারি।
ম্যাক্স প্লাঙ্কও খুব অবাক হলেন ব্যাপারটাতে। তিনি দেখলেন, কোন অণুর এই নির্দিষ্ট শক্তি E হলো hv এর পূর্ণ গুণিতক। এ শক্তি হতে পারে 2hv, 3hv, 4hv এখানেঃ
E শক্তি Energy
h প্লাঙ্কের ধ্রুবক (constant)
v এটি ভি নয়, গ্রীক বর্ন মিউ, যাকে দিয়ে কম্পনাঙ্ক অথবা গতি প্রকাশ করা হচ্ছে।
জানিনা কিছু বোঝা গেলো কি না? আমার বন্ধুলিস্টে নিশ্চই বিজ্ঞানীরা রয়েছেন তাদেরকে আহবান করবো আলোচনায় আংশগ্রহনের।
আজ এই ম্যাক্স প্লাঙ্ক এর কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে আলোচনার কারন হলো, আজ (২৩ এপ্রিল) তার ১৫১ তম জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন ম্যাক্স প্লাঙ্ক
আপনার মতামত জানানঃ