দুনিয়াব্যাপী খবরের কেন্দ্রবিন্দু এখন করোনার টিকা৷ কারণ, করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায় একটি নিরাপদ ও কার্যকর টিকা। করোনা সংক্রমণ বিস্তারের পরপরই বিভিন্ন দেশ টিকা আবিষ্কার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিশ্বে যেভাবে দুর্দমনীয়ভাবে করোনার প্রকোপ এখনো চলছে, তার থেকে মুক্তির জন্য টিকার বিকল্প নেই। সবাই টিকা আবিষ্কার ও উৎপাদনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। অধীর আগ্রহ নিয়ে মানুষ টিকার জন্য অপেক্ষা করছে। সকলে টিকার আওতায় আসতে পারবে কিনা, এনিয়ে রয়েছে সন্দেহ। এ অবস্থায় করোনা টিকার উৎপাদন বাড়াতে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক দাতব্যসংস্থা এমএসএফ। সংস্থাটি বলছে, ধনী দেশগুলো সায় দিলে টিকার পেটেন্ট সাময়িকভাবে উন্মুক্ত করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের কাছে একটি প্রস্তাব গেছে। বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি এ বিষয়ে আলোচনা করবে সংস্থাটির সদস্য দেশগুলো। পেটেন্টের দাবি ত্যাগে যারা আহ্বান জানাচ্ছেন তারা বলছেন, সাময়িকভাবে এটি করা হলে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানি বেশি বেশি করোনার টিকা উৎপাদন করতে পারবে। এই প্রস্তাব অধিকাংশ দেশ স্বাগত জানালেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধিতা করছে।
কভিড-১৯-এর টিকা নিয়ে ধুন্ধুমার রাজনীতি চলছে। কে কার আগে আবিষ্কার করবে এবং বাজার দখল করবে, তা নিয়ে পরাশক্তিগুলো টিকাযুদ্ধে লিপ্ত। প্রতিদিনই টিকা নিয়ে নিত্যনতুন তথ্য আসছে। ওষুধ কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে টিকার পেছনে।
এ পর্যন্ত টিকা তৈরির কাজে সব থেকে এগিয়ে আছে ব্রিটেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। দেশগুলোর মধ্যে চীন সবার আগে টিকার পেটেন্ট করে। অর্থাৎ ওই টিকাটি চীনের অনুমতি ছাড়া অন্য কোনো দেশ উৎপাদন করতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যে টিকা তৈরি করেছে, তার পেটেন্ট উন্মুক্ত করতে দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্দেশে খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাবেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ নোবেলজয়ী বিশিষ্টজনরা। টিকা আরো সহজলভ্য করার স্বার্থে টিকার পেটেন্ট উন্মুক্ত করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি সংরক্ষণের আইন কার্যকর না করতে বাইডেনের প্রতি এই আহ্বান জানান তারা। কিন্তু এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি দেশটি ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, টিকা জাতীয়তাবাদের উত্থানে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন বিপন্ন হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা সত্য হতে চলেছে। অনেক দেশকেই সীমিত পরিমাণে টিকার নাগাল পেতেও মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোও আগাম মূল্য পরিশোধের পরও এখন প্রতিশ্রুত টিকা পাচ্ছে না। যে পরিস্থিতির কথা কেউ ভাবেনি, গোটা বিশ্বে এখন তেমনটাই ঘটতে চলেছে।
ইউরোপের গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেন্ডের বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা পাওয়া না গেলে আগামী এক বছরে বিশ্ব অর্থনীতির জিডিপিতে কোভিড-১৯-এর প্রভাব হবে তিন দশমিক চার ট্রিলিয়ন ডলার৷ আর টিকা পাওয়া গেলে পরিমাণ দাঁড়াবে এক দশমিক দুই ট্রিলিয়ন৷ কিন্তু এক দিকে বছরের শেষে এসে কোভিড-১৯ এর নতুন ধরন এবং অন্যদিকে সব মানুষের টিকা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে সারাবিশ্বে চলছে ভ্যাকসিন-কূটনীতি৷ ঐতিহাসিকভাবে ‘ভ্যাকসিন কূটনীতি’ একটি প্রমাণিত শক্তি হলেও ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’-এর কাছে তা অনেকবারই পরাস্ত হয়েছে৷ পরিণামে বেড়েছে উত্তর-দক্ষিণে অবিশ্বাস৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনার টিকার পেটেন্ট উন্মোক্ত করে দেওয়া হলে এতে যেমন উৎপাদন বাড়বে, তেমনিভাবে টিকা নিয়ে বিশ্বে যে অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্বের যুদ্ধ চলছে তা হ্রাস হয়ে আসতে পারে। টিকার স্বল্পতা নিয়ে করোনা মহামারি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যেখানে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা করোনা প্রতিরোধের জন্য একমাত্র টিকার ওপর নির্ভরশীল হতে বলেছেন। এমতাবস্থায় টিকার উৎপাদন বাড়ানো, সরবরাহ বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ