বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ইসরায়েল ওরাল ভ্যাকসিন পরীক্ষা করতে যাচ্ছে; যা কিনা জেরুজালেমভিত্তিক ওরামেড ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি। কোম্পানিটির সিইও নাদাভ কিদরন জেরুজালেম পোস্টকে এমনটি জানিয়েছেন।
ওরামেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ওরাভ্যাক্স মেডিকেল তেল আবিবের সৌরাস্কি চিকিৎসাকেন্দ্রের প্রাতিষ্ঠানিক পুনঃমূল্যায়ন পরিষদের অনুমোদন পায় ভ্যাকসিনটির। এরপর হাসপাতালটিতেই তারা ওরাল ভ্যাকসিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এখন তারা ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে; যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যেই ওরাভ্যাক্স ইউরোপে কয়েক হাজার ক্যাপসুলের জিএমপি উৎপাদন সম্পন্ন করেছে। এই ক্যাপসুলগুলো ইসরায়েলে পরীক্ষায় ব্যবহার করার পর অন্যান্য দেশেও ব্যবহার করা যাবে।
ওরামেড জেরুজালেমভিত্তিক হাদাসা-বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির উপর নির্ভরকারী একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি।
গত মার্চ থেকে ওরামেড ভারতের প্রিমাস বায়োটেকের সঙ্গে যৌথভাবে নভেল ওরাল ভ্যাকসিন উৎপাদনের ঘোষণা দেয়। এরপর এই দুই কোম্পানি একসঙ্গে ওরাভ্যাক্স গঠন করেছে। তাদের বানানো ভ্যাকসিনটি ওরামেডের ‘পিওডি’ ওরাল ডেলিভারি প্রযুক্তি ও প্রিমাসের ভ্যাকসিন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হযেছে।
ওরামেডের প্রযুক্তি প্রোটিনভিত্তিক অন্যান্য চিকিৎসায়ও মৌখিকভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে আবার ইঞ্জেকশন হিসেবেও নেওয়া যাবে।
প্রিমাস গত মার্চ থেকে নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর একটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য কাজ করে চলছে।
এই নতুন ওরাভ্যাক্স ভ্যাকসিনটি নোভেল করোনাভাইরাসের কাঠামোগত তিনটি প্রোটিনকে আক্রমণ করে; যেখানে বর্তমানের মডার্না এবং ফাইজার করোনাভাইরাদের একটিমাত্র কাঠামো ‘স্পাইক প্রোটিনকে’ আক্রমণ করে, কিদরন বলেন। তাই এই ভ্যাকসিনটি করোনার বিরুদ্ধে বেশি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে।
ভ্যাকসিনটি প্রিক্লিনিক্যাল স্টাডিজে কোভিড-১৯-এর ভ্যারিয়েন্ট এমনকি ডেল্টার উপরও পরীক্ষা করা হয়েছে।
কোম্পানিটি প্রাণীর উপরও পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, এই ভ্যাকসিন শরীরে ইমিউনোগ্লোব্যুলিন জি (আইজিজি) অ্যান্টিবডি এবং ইমিউনোগ্লোব্যুলিন এ (আইজিএ) তৈরি করে। দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিরক্ষার জন্য আইজিএ প্রয়োজন।
সূত্র মতে, সৌরাস্কি ২৪ জন স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষা চালাবে যারা এখনো পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন নেয়নি। এর অর্ধেক একটি ক্যাপসুল নেবে এবং বাকি অর্ধেক দুইটি ক্যাপসুল নেবে। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য ভ্যাকসিনের ফলে মানবদেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির পরিমাণ ও করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা, কিদরন বলেন।
পরিকল্পনা হলো, আমরা প্রমাণ করতে চাই এই ভ্যাকসিনের ধারণাটি সঠিক; যে এটি মানবদেহে কাজ করে। আমি আশাও করি এটা কাজ করবে। এবার চিন্তা করুন, আমরা কাউকে ওরাল ভ্যাকসিন দিচ্ছি এবং তার মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে করোনার বিরুদ্ধে। পুরো পৃথিবীর জন্য এটা বৈপ্লবিক ঘটনা হবে, তিনি বলেন।
এটা প্রমাণিত হলে, বিশ্বের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে, কিদরন বলেন।
ওরাল কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বৃহৎ পরিসরে ভ্যাকসিন সরবরাহের অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর করবে। সম্ভবত মানুষ নিজের বাড়িতে বসে ভ্যাকসিন নিতে পারবে, তিনি জেরুজালেম পোস্টকে বলেন। তিনি বলেন, যখন ভ্যাকসিন প্রদানের হার বৃদ্ধিতে প্রশাসন ব্যর্থ হচ্ছে, তখন ওরাল ভ্যাকসিন আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে; কারণ ফ্লুর ভ্যাকসিনের মতো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনও প্রতি বছরই নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
ওরাল ভ্যাকসিনের সুবিধা হলো এটি বেশি নিরাপদ এবং কার্যক্ষম; এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম বলে জানান কিদরন।
ভ্যাকসিনটি রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রায় যেকোনো স্থানে সরবরাহ করা যাবে এবং ঘরের তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। যা কিনা এই ওরাল ভ্যাকসিনকে যৌক্তিকভাবে পৃথিবীর যেকোনো দেশে সরবরাহকে সহজতর করেবে, তিনি বলেন।
অবশেষে ওরাল ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে পেশাদার প্রশাসনের প্রয়োজন পড়বে না। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরুর সময়ের ছয় সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
যদি এই পরীক্ষা সফল হয়; কিদরন জানান, তিনি ভ্যাকসিনটি জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের অনুমোদন পাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। যাতে করে যে সমস্ত দেশের এই ভ্যাকসিন সবথেকে প্রয়োজন তারা যেন এটির সুবিধা দ্রুত পেতে পারে; যেমন সাউথ আফ্রিকা তাদের জনসংখ্যার তুলনায় প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন জোগাড় করতে পারেনি, তাদের এই ভ্যাকসিন প্রয়োজন।
কোম্পানিটি খুবই সীমিত স্বেচ্ছাসেবীদের উপর এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালাবে এবং এটি যে কোনো একটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে উর্ধ্বমুখী বাজারে অনুমোদনের চেষ্টা করবে বলে জানান কিদরন এবং শুধুমাত্র এর পরেই যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন চাইবে।
যদিও শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং আরো কিছু ধনী দেশ ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রথমে পেয়েছিল। আমার মনে হয় করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার এই প্রতিযোগিতায় জিতে যাওয়ারাই ওরাল ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও আগে পাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৯
আপনার মতামত জানানঃ