
যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিল জার্মানি। বুধবার (২১ এপ্রিল) দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জুলাইয়ের প্রথম দিক থেকেই তারা তাদের সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এক ঘোষণায় জানিয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা তাদের সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেবে। মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের এই প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী ১ মে থেকে। তবে ওইদিন শুধু মার্কিন বাহিনীই নয়, আফগানিস্তান থেকে বিদায় নিতে শুরু করবে ন্যাটো সেনারাও।
গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর মার্কিন প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছিল, তালেবান যদি প্রতিশ্রতি রক্ষা করে, তা হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট আফগানিস্তান থেকে পরবর্তী ১৪ মাসের (২০২১ সালের মে) মধ্যে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। জার্মানির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা হচ্ছে সেনা প্রত্যাহারের সময়কাল কমিয়ে আনা। আগামী ৪ জুলাই থেকে এই প্রক্রিয়া শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ন্যাটোর পক্ষ থেকে নেওয়া হবে বলেও জোর দেন তিনি।
ন্যাটোর ৯ হাজার ৬০০ সদস্যের শক্তিশালী প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা মিশন রয়েছে আফগানিস্তানে। এর মধ্যে মার্কিন সেনাবাহিনী অন্তর্ভুক্ত এবং ন্যাটো ওয়াশিংটনের সামরিক শক্তির ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। ন্যাটোতে বর্তমানে ৩৬টি সদস্য ও অংশীদার দেশের সদস্যরা রয়েছে। এক হাজার ১০০ সেনা নিয়ে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সৈন্য দল রয়েছে জার্মানির। তালেবান এবং আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনায় অচলাবস্থার পরও সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।
আফগানিস্তান ছাড়লে সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা কঠিন হয়ে পড়বে
মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়লে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা কঠিন হয়ে পড়বে। এমন মন্তব্য করেছেন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের জেনারেল কেনেথ ফ্র্যাংক ম্যাকেঞ্জি জুনিয়র। মঙ্গলবার প্রতিনিধি পরিষদের সশস্ত্র বাহিনী কমিটির কাছে নিজের এমন মতামত দেন তিনি।
জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘তালেবানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত তারা কী করে। যদি তারা আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চায়, তাহলে তাদের চুক্তি মেনে চলতে হবে।
তিনি জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর প্রতিবেশী কোনও দেশে গোয়েন্দা রাখার বিকল্প ভাবনা যুক্তরাষ্ট্র খতিয়ে দেখছে। তাহলে সেনা প্রত্যাহারের পরও দেশটির পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা যাবে। সেক্ষেত্রে কোনো বিপদ এলে দ্রুত তার মোকাবিলা করা যাবে।
ভবিষ্যতে সন্ত্রাসবিরোধী মিশনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে কমিটিকে অবহিত করার ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘বিষয়টিকে আমি হালকা করে দেখাতে চাই না। রঙিন চশমা পরিয়ে বলতে চাই না সব কিছুই সহজ। ম্যাকেঞ্জি জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনকে এ মাসের শেষ নাগাদ তাকে সব ধরনের বিকল্পের কথা জানাতে বলা হয়েছে।
শীর্ষস্থানীয় এই জেনারেল আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের পর যদি নতুন কোনও ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবিলার জন্য দেশটিতে, এমনকি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যও আবার যেতে চায় তা হলে তাকে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অংশবিশেষের দায়িত্বপ্রাপ্ত মার্কিন বাহিনীর এই কমান্ডার এমন সময়ে এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করলেন যখন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীকে দেশে ফেরানো নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তারা।
অন্যান্য কর্মকর্তারাও সম্ভাব্য সমাধানের দিকে নজর রাখছেন। সদ্য সাম্প্রতিক আমেরিকান গোয়েন্দা বিভাগের মূল্যায়নে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনাদের অনুপস্থিতিতে আফগানিস্তানে শান্তির সম্ভাবনা কমে আসবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ