তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য ঢাকায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রথমবারের মতো চালু হলো মাদ্রাসা। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের লোহার ব্রিজের ঢাল এলাকায় ‘দাওয়াতুল কুরআন তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা’ নামে প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে।
তিনতলা একটি ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম শুরু হওয়া মাদ্রাসাটিতে শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ নিতে পারবেন। অনাবাসিক এই মাদ্রাসায় যেকোনো বয়সী হিজড়া ভর্তি হতে পারবেন।
মাদ্রাসাটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ ও বাড্ডা এলাকার ৪০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ অংশ নেন। তাদের মধ্যে যাত্রাবাড়ির মাতুয়াইলের হাজী মসজিদ এলাকা থেকেই এসেছেন অন্তত ১৮ জন।
দুই পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকালে বাংলাদেশ হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু প্রধান অতিথি ছিলেন। বিকালের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরাঙ্গীরচরের বাইতুল উলূম ঢালকানগর মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি জাফর আহমাদ।
মাদ্রাসাটির অর্থায়ন করছে মরহুম আহমেদ ফেরদৌস বারী ফাউন্ডেশন। এর অধ্যক্ষ পরিচালক মুফতি আবদুর রহমান আজাদ নিজেও অন্যতম একজন উদ্যোক্তা। মুফতি আজাদ বলেন, এই মাদ্রাসায় প্রথমে হিজড়াদেরকে কুরআন শিক্ষা দেওয়া হবে। এছাড়া কওমি শিক্ষা সিলেবাস অনুসারে নূরানী, নাজেরা, হিফজুল কুরআন ও কিতাব বিভাগ চালু হবে। শুক্রবার থেকেই তাদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
পরবর্তিতে এখানে হিজড়াদেরকে কারিগরী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে অভিজ্ঞদের নিয়ে আরেকটি আলাদা বিভাগ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। মাদ্রারাসাটিতে ১০ জন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান এই শিক্ষক।
অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার প্রশিক্ষক আবদুল আজিজ হুসাইনী বলেন, দিনটি বিশ্বের মধ্যে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমার জানা মতে, তৃতীয় লিঙ্গের লোকদের জন্য কোথাও আলাদা কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এটাই প্রথম।
তিনি বলেন, এরা সমাজে অবহেলিত, নানা বিষয়ে তারা বঞ্চিত। এমনকি তারা কোনো মসজিদে গিয়েও নামাজ পড়তে পারে না। তাদেরকে এখানে কুরআন শিক্ষা দেওয়া হবে। পরবর্তিতে কারিগরী শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
মাদ্রাসার পরিচালক আবদুর রহমান আজাদ বলেন, হিজড়াদের জন্য এই উদ্যোগ প্রথমত মহান আল্লাহকে খুশি করা। দ্বিতীয়ত মানবিক বিবেচনা করে বিবেকের তাড়নায় হিজড়াদের কল্যাণে এই মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এর আগে গত ছয় মাস ধরে ঢাকার যেসব এলাকায় হিজড়ারা বসবাস করেন এমন আট জায়গায় গিয়ে তাদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া শুরু করা হয় বলে জানান তিনি।
হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু বলেন, হিজড়ারা যদি সার্বিক সহযোগিতা পায় তাহলে তারা দেশের সম্পদে পরিণত হবে। তাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কাজের সুযোগ দিতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে কিছু করতে যাবে না। অপরাধ কমে আসবে।
অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম শুভ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম মাদবর বক্তব্য দেন। মাদ্রাসার জন্য স্থায়ী একটি জায়গার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান কাউন্সিলর সাইদুল।
সূত্র : দেশ রুপান্তর
আপনার মতামত জানানঃ