কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদকসহ ডিউটি শুরু করার মুহূর্তে এক কারারক্ষীকে আটক করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বুধবার (৩১ মার্চ) কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহাজাহান আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আটক কারারক্ষী রোমান ভূঁইয়া (২৪) চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার বেলতলী বাজারের হাপানিয়া গ্রামের শাহাজাহান ভূঁইয়ার ছেলে।
এ ঘটনার পর রোমান ভূঁইয়াকে কারাবিধি অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টায় ১০৬টি ইয়াবা বড়িসহ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের দ্বিতীয় ফটক থেকে সহকারী প্রধান কারারক্ষী তরিকুল ইসলাম ওরফে শাহিনকে (৫২) আটক করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর তার কক্ষ তল্লাশি করে আরও ৪১৬টি ইয়াবাসহ মোট ৫২২টি বড়ি উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এক বছরের মধ্যে দুই কারারক্ষী মাদকসহ ধরা পড়লেন।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৩১মার্চ) সকাল ৫টা ৫৮ মিনিটে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরের একটি ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছিলেন কারারক্ষী রোমান ভূঁইয়া। তখন চেক করার সময় দেখা গেল রোমানের পরনের প্যান্টের সঙ্গে পায়ের অংশে কিছু একটা বস্তু লাগানো আছে। পরে তল্লাশি করে পা ও প্যান্টের সঙ্গে বিশেষ কায়দায় লাগানো দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
এরপর কারারক্ষী রোমান ভূঁইয়াকে নিয়ে তার কক্ষে যান কারাগারের কর্মকর্তারা। এই সময় তাঁর কক্ষে থাকা ট্রাংক থেকে ৪ প্যাকেট গাঁজা, ৫টি মুঠোফোন ও নগদ ২০ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এরপর বিষয়টি কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদকে জানানো হয়। পরে তাঁকে কারাবিধি অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। রোমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মাদকের ঘটনায় কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর পুলিশ এসে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়।
জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘২০১৮ সালের ১ জুলাই রোমান ভূঁইয়া কারারক্ষী পদে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে যোগদান করেন। এখানে যোগদানের পর আমি সব কারারক্ষীদের বলে দিয়েছিলাম মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে যারা জড়িত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেউ মাদক কেনাবেচায় জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দুজনকে মাদক কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কারাবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, কারাগারে ঢুকতেই মূল ফটকের ওপর লেখা, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাব আলোর পথ’। বাস্তবে এখানে টাকায় মিলছে ইয়াবা, গাঁজা। মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন কিছু কারারক্ষী। ইয়াবা-মাদকের ভয়াবহ থাবা থেকে তরুণ সমাজকে বাঁচাতে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। কারণ এটি কেবল মাদক ব্যবসার প্রশ্নই নয়, এর সঙ্গে কারা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ও জড়িত।
বারবার এ ধরনের অভিযোগ আসায় কারাগার চিহ্নিত অপরাধীদের অপরাধের সাম্রাজ্য বিস্তার করার মাধ্যম হয়ে পড়েছে কিনা, এমন প্রশ্ন তোলাও অযৌক্তিক হবে না। কারাগারের মতো সুরক্ষিত জায়গায় কিছু কারারক্ষীর সহায়তায় মাদক ব্যবসা চলছে। বিষয়টিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা । তারা বলেন, অপরাধ দমনে পুলিশ সদর দপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে আরো বেশি শক্তিশালী হতে হবে। অভিযোগ আসলে সাথে সাথে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে তাদের মধ্যে ভীতি আসবে। তারা আর এ ধরনের অপরাধ করবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৪৮
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ