আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ৮ নেতার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। ২০ লাখ চাঁদা দাবি করায় চায়না গার্ডেন সিটি ডেভেলপার্স কোম্পানির প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার আফাজুর রহমান বাদি হয়ে গত রবিবার(২১ মার্চ) রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮ জনকে। এরা হলেন নাসির উদ্দিন, ওমর সরকার অন্তু, আতিকুর রহমান, মামুন, কাউছার, শাকিল, নিয়ামত হোসেন রাজু ও জয়। এদের মধ্যে আতিকুর রহমান ২৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। নিয়ামত হোসেন রাজু শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
জানা যায়, রাজধানীর কলাবাগানের এই চাঁদাবাজ গ্রুপটি এক ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এই চাঁদাবাজ গ্রুপের হুমকির মুখে কলাবাগান থানাধীন কাঁঠালবাগানের চায়না গার্ডেন সিটি ডেভেলপার্স কোম্পানির নির্মাণাধীন ১০ তলা বিশিষ্ট সিজিডিএল-সোনারগাঁও টাওয়ার, সাত তলা বিশিষ্ট সিজিডিএল টাওয়ার-১ ও শ্যামলীর ২ ও ৪ নম্বর রোডের ১২/চ/১/এ নম্বরে নয় তলা বিশিষ্ট সিজিলি-গোধূলী ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদি প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার আফাজুর রহমান জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর এই চাঁদাবাজ গ্রুপটি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্মাণ বাবদ ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মধ্যস্থতা করলে তারা চাঁদা দাবি বন্ধ করে দেয়। ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ চলার পর তারা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। গত শনিবার নাসির উদ্দিন ও ওমর সরকার অন্তুর নেতৃত্বে ৭/৮ জন শ্যামলী ২ নম্বর রোডের সাইট অফিসে এসে হামলা চালায়। তারা ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানকে জানানো হয়। পরে রবিবার রাতে শেরেবাংলা নগর থানায় তারা মামলা করেন।
মামলার ১ নম্বর আসামি নাসির উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, কাঁঠালবাগান ও শ্যামলীতে নির্মাণ করা ভবনের জমির মালিক তার বোনের স্বামী ওমর সরকার অন্তু। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার প্রশ্নই ওঠে না। বরং তাদের নির্মাণকাজের অনেক ত্রুটি রয়েছে। এ ব্যাপারে রাজউকের কাছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়। রাজউক ওই নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে জমির মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। চায়না গার্ডেন সিটি ডেভেলপার্স কোম্পানির নির্মাণ কাজের অনেক ক্রুটি রয়েছে। তারা ভবন নির্মাণে রাজউকের ডিজাইন অনুসারে কোনো বেজমেন্ট স্থাপন করেনি। ভবনগুলোতে লিফট ও জেনারেটর অত্যন্ত নিম্নমানের স্থাপন করা হয়েছে। টাইলস লাগানো হয়েছে নিম্নমানের। বিষয়গুলো নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করা হয়েছে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুনুর রশিদও বিষয়টি জানেন। তাহলে জমির মালিক হয়ে আমরা কিভাবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে চাঁদা দাবি করবো?
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ছাত্রলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে।
তারা বলছেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতারা চাঁদাবাজিসহ বহু অপকর্মই করে থাকেন, যার বিরুদ্ধে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতেও ভয় পান। স্থানীয় পদপ্রাপ্ত প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে থানা প্রশাসনও এক প্রকার নমনীয় থাকেন। সেটা হোক ভয় অথবা কোনো বিনিময় মাধ্যমে। খুব ঠেকায় না পড়লে স্থানীয় প্রশাসন মামলা নেন না। ফলে স্থানীয় নেতারাও লিপ্ত থাকেন লাগাম ছাড়া অপরাধকর্মে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মসহ স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষমতা বলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে তারা স্থানীয় পর্যায়ে নানা অপকর্মে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া চললে এমনটি হবার ঘটনা অনেকটাই নেমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/ডিই/কেএইচ/১৯১২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ