জাপানের উত্তর-পূর্ব উপকূলে ভয়াবহ ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছে। আজ শনিবার (২০ মার্চ) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৯মিনিটের দিকে জাপানের মিয়াগি প্রদেশ উপকূলে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পের এ ঘটনা ঘটে। এতে দেশটিতে আবারও সুনামির আশঙ্কা তৈরী হয়েছে। এ ঘটনায় বড় ধরনের সুনামি সতর্কতা জারি করেছে স্থানীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিন ভূমিকম্পের পরপরই উপকূলীয় অঞ্চলে এক মিটার উচ্চতার সুনামি আঘাত হেনেছে। খবর রয়টার্সের।
জাপানের সরকারি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে স্থানীয় অধিবাসীদের সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে, মিয়াগি অঞ্চলে এক মিটার উঁচু পর্যন্ত সুনামি হতে পারে।
জাপানের আবহাওয়া সংস্থা জানায়, মিয়াগি অঞ্চলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬:২৬ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ভূমি থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীরে এবং এর মাত্রা ছিল ৭.২।
মুদ্র উপকূলের কাছে না যেতে লোকজনকে সতর্ক করে দিয়েছে এনএইচকে।
সুনামি সতর্কতা জারি হওয়ার পর ওয়াতারি শহর থেকে ৬ হাজার ৯১১ জন বাসিন্দাকে সরিয়ে নেওয়ায় নির্দেশ দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইওয়াতে প্রদেশে অফুনাতো শহরের ৬৯টি জায়গায় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
ইশিনোমাকি শহরের একটি দোকানের কর্মী সিজু অনোডেরা এনএইচকে-কে বলেন, “দীর্ঘক্ষণ ধরে এপাশ-ওপাশ দুলছিল। এমনকি গত মাসের ভূমিকম্পের চেয়েও এটা বেশি সময় ধরে ছিল। তবে অন্তত এখানকার ভবনগুলো টিকে আছে। কাচের বোতল মেঝেতে পরে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেছে।”
এনএইচকের ভিডিওতে দেখা যায়, ৩০ সেকেন্ড ধরে কম্পন চলার পর ছাদ থেকে একটি ফলক খসে নিচে পড়েছে। তবে শেলফ থেকে কোনো কিছু পড়ার বা কোনো তাৎক্ষনিক ক্ষয়ক্ষতির কথা এইএইচকে জানায়নি।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৪শ কিলোমিটার দক্ষিণে টোকিওতেও কম্পন অনুভূত হয়ে থাকতে পারে।
ভূমিকম্পের দেশ’ হিসেবে পরিচিত জাপান বারবার বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। ভূমিকম্প, ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট সুনামিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবসময় প্রস্তুত থাকতে হয় জাপানিদের।
ভূ-তাত্ত্বিকদের মতে, জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলায় যার অর্থ হয় ‘আগুনের গোলা’। ‘রিং অব ফায়ার’ এমন একটি কাল্পনিক বেল্ট যা ঘোড়ার খুর আকৃতির মতো প্রধানত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে।
রিং অব ফায়ারে যেসব অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ। এই রিং অব ফায়ারই ৯০ শতাংশ ভূমিকম্পের কারণ। ৪০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এই ‘রিং অব ফায়ার’ অঞ্চলে ৪৫২টি আগ্নেয়গিরি রয়েছে, যা পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত মোট আগ্নেয়গিরির ৭৫ শতাংশ।
এশিয়ার জাপান, পলিনেশিয়ার টোঙ্গো, দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর এই রিং অব ফায়ারের অন্তর্ভুক্ত। তাই এসব অঞ্চলেই বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে।
জাপানের উত্তরাঞ্চলে ১০ বছর আগে ২০১১ সালের ১১ মার্চ প্রলয়ঙ্করী এক ভূমিকম্প ও সুনামিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়; ধ্বংস হয় বহু শহর, ফুকুশিমায় বিপর্যয় ঘটে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে।
২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে ফুকুশিমা দাইইচি পরমাণু দুর্ঘটনায় বৃহৎ পরমাণবিক বিপর্যয় হয়। ওকুমায় অবস্থিত ফুকুশিমা দাইইচি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ছয়টি চুল্লীর (রিয়্যাক্টরের) দু’টিতে বিস্ফোরণ ঘটে, এর পরেই আরও তিনটি রিয়্যাক্টরের আংশিক গলন ও অগ্নিকাণ্ড ঘটে। নিকটবর্তী অঞ্চলের বহু বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাপানের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ২০১১ সালের তীব্র ভূমিকম্প ও সুনামির ফলে যে অঞ্চলে বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল, এবারও সেই অঞ্চলেই ভূমিকম্প হওয়ায় সুনামির আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই কারণেই আজও সুনামি-সতর্কতা জারি হয়। মিয়াগি প্রদেশে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে এক গজ পর্যন্ত সুনামির এ সতর্কতা জারি হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৩৪
আপনার মতামত জানানঃ