করোনা পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই নেওয়া হচ্ছে অমর একুশে বইমেলার প্রস্তুতি। তবে পরিস্থিতির অবনতি হলে যেকোনো সময় স্থগিত করা হতে পারে বইমেলা। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, এখন পর্যন্ত যেভাবে আছি, তাতে বইমেলা মাসব্যাপী চলবে বলে আমরা বিশ্বাস করি এবং আশা রাখছি। তবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তাব করেছি- পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয়, প্রয়োজনে বইমেলা হয়তো বন্ধও করে দেওয়া হতে পারে।
বইমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এবারের বইমেলা ১৮ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে চলবে আগামী ১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ১৮ই মার্চ বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মেলার উদ্বোধন করবেন ভার্চুয়ালি এবং শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আমার দেখা নয়াচীন -এর ইংরেজি অনুবাদ গ্রন্থ উন্মোচন করবেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে একাডেমির পক্ষ থেকে সম্ভব সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা মেলায় আসবেন তাদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট ৫৪০টি প্রতিষ্ঠানকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৩৩ টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৮০টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মেলার অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। একাডেমির মাঠজুড়ে শ্রমিকদের স্টল তৈরিতে ব্যস্ত দেখা গেল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। স্টল ও প্যাভেলিয়নগুলোর সাজসজ্জা, ভেতর পথ তৈরি, এসবের কাজ চলছে এখানে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিড় এড়ানোর জন্য এবার মেলার পরিসর গতবারের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বাড়ানো হয়েছে। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলার আয়তন ১৫ লাখ বর্গফুট।
বরাবরের মতোই বেলা সাড়ে তিনটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত এবং শুক্র ও শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা খেলা থাকবে। মহামারীর কারণে বিলম্বিত বইমেলায় এবার তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য থাকবে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় মঙ্গলবার সকালে নিরাপত্তা প্রস্তুতি দেখতে মেলা প্রাঙ্গণে যান। পরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে সাংবাদিকদের সামনে তিনি কথা বলেন।
কৃষ্ণপদ বলেন, “আমরা একটি ভিন্ন সময়ে বইমেলা শুরু করছি। প্রতিবছর আমাদের যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, এবার তার সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।”
তিনি জানান, বইমেলার প্রতিটি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে থাকবে, বের হওয়ার জন্য থাকবে আলাদা পথ। ভিড় এড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক ও বাংলা একাডেমির বিপরীত পাশ দিয়ে আরও দুটি করে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ থাকবে এবার।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, “আপনারা জানেন, রাস্তাঘাটে উন্নয়ন মূলক কাজ চলছে, এজন্য অতিরিক্ত গেইট রাখা হয়েছে। এবার কিছু কিছু নিরাপত্তার কাঠামো পরিবর্তন করা হয়েছে। আমাদের মোবাইল পেট্রোল থাকবে, ফুট পেট্রোল থাকবে।”
বইমেলার সামগ্রিক সৌন্দর্য, বিন্যাস ও প্রকাশনায় থাকবে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আবহ। মেলার কারুকাজ ও আলোকচিত্রে থাকবে স্বাধীনতার চেতনার প্রকাশ। স্বাধীনতার পাঁচটি দশককে পাঁচটি আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হবে মেলায়; যাতে বইমেলায় এসে দর্শনার্থীরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুভূতিও উপলব্ধি করতে পারেন। এছাড়া স্বাধীনতা স্তম্ভের চারদিকে বর্ণমালা দিয়ে নির্মাণ করা হবে হরফ স্থাপনা।
ভাইরাসের বাইরে অন্য কোনো হুমকি এবার দেখছেন কি না- সেই প্রশ্নে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “বিষয়টা আমাদের মাথায় রয়েছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই আমাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন বই প্রকাশ হচ্ছে কিনা আমরা খোঁজ রাখছি। কেউ অপরাধমূলক কাজ করছে কিনা সে ব্যাপারেও আমরা নজরদারি করছি। যথা সময়ে তথ্য পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
বইমেলা ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ পোশাকে পুলিশ সদস্যরা থাকবেন, আর্চওয়েতে তল্লাশি করা হবে, সিসিটিভিতে হবে নজরদারি। এছাড়া গোয়েন্দারাও মাঠে থাকবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাজ্জাদুর রহমান বলেন, এ বছর বইমেলার নিরাপত্তায় ৩২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫২৯
আপনার মতামত জানানঃ