কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। সেইসঙ্গে এবারের আক্রান্তের গতি-প্রকৃতিতেও রয়েছে ভিন্নতা। এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ। আবার আক্রান্তদের অনেকেরই আইসিইউ লাগছে।
গতকাল (১৪মার্চ) রাজধানীর শ্যামলীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টার উদ্বোধনকালে এমন তথ্যই দিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ‘গত দুই মাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। নতুন করে এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই তরুণ। যাদের বেশির ভাগের জন্যই আইসিইউ প্রয়োজন পড়ে।’ চলমান করোনা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হওয়ায় সরকার আবারো কঠোর স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা দিতে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন মনিটর করতে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল তথ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
করোনার এবারের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করে গতকালই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ প্রজ্ঞাপন দেশের সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণের হার রোধের জন্য সবক্ষেত্রে মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ পরিস্থিতিতে সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটরিংয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বর্তমান সময়ে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে সন্দেহ করছে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের কারণে বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু ওই ভ্যারিয়েন্ট সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে আগের ভ্যারিয়েন্টকে রিপ্লেস করে- এটা এত তাড়াতাড়ি সম্ভব নয়। সুতরাং এই একটা জিনিস দিয়ে এটাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আরো অন্য বিষয় থাকতে পারে।’
সংক্রমণ বাড়ার আরো কারণ ব্যাখ্যা করে জাতীয় পরামর্শক কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘শীতকালে আমাদের অন্যান্য ভাইরাস খুব বেশি সংক্রমিত হয়েছিল- সর্দি-কাশি, জ্বরজারিতে। রেসপিরেটরি রুটে যদি একটা ভাইরাস ঢুকে যায়, অন্য ভাইরাসকে ঢুকতে দেয় না। দেশি ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে হয়তো করোনা ভাইরাস সেভাবে সুযোগ পায়নি। এ কারণে হয়তো শীতকালে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল। এখন গ্রীষ্মকাল আসছে, শীতকালের ভাইরাসগুলো কমে গেছে। এখন আবার করোনা ভাইরাস সুযোগ পেয়েছে। আবার সংক্রমণ বাড়ছে। খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না, এটা আমাদের ধারণা। বলছি না যে, এটা সত্য, প্রমাণিত। আমার ধারণা, এই সংক্রমণ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। তারপর ওইভাবেই থাকবে। গত বছর যেমন ২০, ২২ এমনকী ৩১ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছিল; ওই রকম হবে না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ১৫৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট করোনা শনাক্ত পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জনের। একইসঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে আট হাজার ৫৪৫ জনের। এর বিপরীতে গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৩৮৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন পাঁচ লাখ ১১ হাজার ৬৯৫ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ