ধর্মীয় উগ্রবাদ হিসেবে চিহ্নিত করে জাতীয় সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হচ্ছে শ্রীলঙ্কায়। সেই সঙ্গে এক হাজারের বেশি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জনসুরক্ষা মন্ত্রী সরথ বীরাসেকেরা। আজ শনিবার (১৩ মার্চ) তিনি এ কথা জানান। খবর আল জাজিরা
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আলজাজিরা জানায়, শ্রীলঙ্কায় মুসলিম মহিলাদের মুখমণ্ডল ঢাকা পোশাক নিষিদ্ধ করতে ইতিমধ্যেই কাগজপত্রে সই করে ফেলেছেন মন্ত্রী। শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন মিললেই বোরকা পরা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন সরথ বীরাসেকেরা।
সরথ বীরাসেকেরা বলেন, ‘অতীতে আমাদের এখানে মুসলিম মহিলারা কখনই বোরকা পরতেন না। এটা ধর্মীয় গোঁড়ামির প্রতীক, যা বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। আমরা নিশ্চিতভাবে এটা নিষিদ্ধ করতে চলেছি।’
মন্ত্রী বীরাসেকেরা আরও জানিয়েছেন, হাজারেরও বেশি মাদ্রাসা বন্ধ করারও পরিকল্পনা নিয়েছে সে দেশের সরকার। তার দাবি জাতীয় শিক্ষা নীতি লঙ্ঘন করছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো। সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় ইসলামী জঙ্গিদের বোমা হামলায় আড়াইশ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এরপর দেশটিতে বোরকা পরা সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
শ্রীলংকায় শতাব্দী প্রাচীন সময় থেকেই মুসলিমরা বসবাস করছে এবং এখন মুসলিমদের সংখ্যাও সেখানে উল্লেখযোগ্য। তবে দেশটির মোট দুই কোটি দশ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা দশ শতাংশের নীচে। তবে এর মধ্যে অল্প পরিমাণ নারীই শরীর ও মুখমণ্ডল ঢেকে এমন নিকাব বা বোরকা পরিধান করে থাকে।
দেশটির মুসলিম পণ্ডিতদের সংগঠন অল সেলন জামিয়াতুল উলামাও মুখ ঢাকা পড়ে যায় এমন পোশাক পরিধান থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
এদিকে নারীদের বোরকা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় মুসলমানরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, বোরকা নিষিদ্ধের এই বার্তা এটাই বলছে- লংকান মুসলমানরা নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এতে মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সংশয় তলানিতে চলে যাবে।
শ্রীলঙ্কা ছাড়াও কয়েক বছর ধরে ইউরোপে একাধিক আইএস হামলার পরে বোরকার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বেশ কিছু দেশ। এর আগেই ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম ও ল্যাটভিয়া— ইউরোপের এই সাতটি দেশে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সম্প্রতি সময়ে সুইজারল্যান্ডও সে পথেই হেঁটেছে। এবার তাদের সাথে যোগ দিল শ্রীলঙ্কা।
পাশাপাশি কিছু মুসলিম দেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি আছে বিশেষ এই পোশাকটির বিরুদ্ধে। তিউনিসিয়া, নাইজার, মরোক্কো, তাজিস্তান, শাডসহ আরও অনেক মুসলিম দেশেই বোরকা নিষিদ্ধ রয়েছে। তুরস্কেও কয়েক বছর বোরকা নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত দেশটির সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্কার্ফ পরা নিষিদ্ধ ছিল।
বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, বর্তমান বিশ্বে বোরকা মুলত মিডলইস্ট এবং আমাদের এই উপমহাদেশেই কেবল চালু আছে। কয়জন নারী স্বেচ্ছায় এই কালো নেকাবসহ বোরকা পরেন একটা সার্ভে করলে ভালো হতো।বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই পোশাক নারীদের ওপর চাপিয়ে দেয় পুরুষেরা। প্রচন্ড গরমে কালো বোরকার নীচে গরমে হাসফাস করা নারীরা ভয়েও কোনদিন জানাতে পারেনা তাদের কষ্টের কথা। এছাড়া বোরকা ব্যবহৃত হয় চুরি, ডাকাতিসহ নানা ক্রাইমে। চেহারা লুকিয়ে রাখতে ছদ্মবেশ নিতেও বোরকার জুড়ি মেলা ভার।
এদিকে চলতি বছরের শুরুতে ভারতের আসামে ৭০০টি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি আসাম বিধানসভায় এই আইন পাস হয়েছে। ভারতের আসামে মাদ্রাসা নিষিদ্ধ করার পরই শ্রীলংকা থেকে এ ঘোষণা এলো।
এদিকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন মহল থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা নিষিদ্ধকরণে আওয়াজ উঠেছে। অনেকে আবার মাদ্রাসা শিক্ষাকে সংস্কার করে মূল শিক্ষার সাথে সংযুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধর্মীয় শিক্ষকরা তাদের শ্রদ্ধার আসনটি হারাতে বসেছেন তার কারণ তাদের নৈতিকস্খলন। যেটিই আগে ছিল তাদের প্রধান হাতিয়ার, গর্ব করার বিষয়। বিবেকবোধের কারণে সমাজ তাদের শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন আর এখন দেখেন ঘৃণার চোখে। কারণ তাদের একটি অংশ ধর্ষণ, বলাৎকারের মতো ঘটনার সাথে অভিযুক্ত বা জড়িত। এ থেকে মুক্ত হতে না পারলে তার প্রভাব পড়বে পুরো সমাজেই।
এসডব্লিউ/কেএইচ/২০৩২
আপনার মতামত জানানঃ