গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা তিনশোর ঘরে নেমে এলেও গত কয়েকদিন ধরে তা ৬০০ এর ওপরে উঠে গেছে। আসছে গরমকালে করোনার প্রকোপ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার (৫ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই সংখ্যা ছিল ৬১৯ জন। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত এক সপ্তাহ ধরেই সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। করোনার টিকা চলে আসার পর স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে মানুষের শিথিলতা চলে আসায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখন সতর্ক না হলে টিকা আসার পরেও পরিস্থিতি আবার খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন বিষেশজ্ঞরা।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল গত বছরের ৮ মার্চ। পরের দুইমাস দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা একশোর মধ্যে ছিল। এরপর সেটা বাড়তে বাড়তে জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। দেশে ২ জুলাই সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
ধারণা করা হচ্ছিল, শীতকালে ভাইরাসের প্রকোপ আরও বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। নভেম্বরে সংক্রমণ বাড়লেও ডিসেম্বর থেকে সেটা দ্রুত নামতে থাকে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণের হার তিন শতাংশের নীচে নেমে আসে। এখন আবার এক সপ্তাহ ধরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এক্ষেত্রে ভাইরাসের নতুন ইউকে ধরনটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে কি-না সেটা পরীক্ষা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বেনজির আহমেদ।
বিশ্বে করোনার যেসব ধরন দেখা গেছে তারমধ্যে ব্রিটেন বা ইউকে ভেরিয়েন্ট বেশ দ্রুত ছড়ায়। বেনজির আহমেদের ধারণা, বাংলাদেশে ইউকে ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটেনে থাকা বহু প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রতি দেশে এসেছেন। তাদের টেস্টিং বা কোয়ারেন্টিন ঠিকমতো হয়নি। তাদের মাধ্যমে নতুন ভেরিয়েন্ট এসে পড়লে সংক্রমণ বাড়তে থাকবে। সরকারের দায়িত্ব হলো, বাংলাদেশে এই ভেরিয়েন্টটা সত্যিই প্রবেশ করেছে কি-না জিন সিকোয়েন্সিং করে সেটা নিশ্চিত হওয়া ও সঠিক তথ্যটি চেপে না রেখে তাদের উচিত হবে মানুষকে জানানো।
বেনজির আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা শীতকালে নয় বরং গরমকালেই বেশি থাকে। করোনা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার বৈশিষ্ট্য এক রকম। তাই এবারের গরমেও করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে। এদিকে ইউরোপের দেশগুলোয় শীতকালে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পেছনে হিটার ব্যবহারকে বড় কারণ মনে করা হয়।
বাংলাদেশে গরমকালেই সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক হোসেন। তিনি বলেন, গরমকালে অনেকেই বাসায় বা কর্মস্থলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার করেন, ছোট ঘরে বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করেন। দুটি ক্ষেত্রে একই বাতাস পুরো জায়গা জুড়ে বারবার সঞ্চালিত হয়, ফলে ওই ঘরে কেউ করোনাভাইরাস পজিটিভ থাকলে, সেটা অন্যদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই আমাদের দেশে গরমকালেই সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা বেশি। কারণ আমাদের অল্প জায়গায় বেশি মানুষ থাকে, বেশিরভাগই কোন না কোন শীতলীকরণযন্ত্র ব্যবহার করে বলেন তিনি।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা বলেন, জানুয়ারি থেকে করোনার সংক্রমণ কমে আসায় এবং দেশব্যাপী টিকা দেওয়া শুরু হওয়ায় জনমনে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। সে-কারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ছুটির দিনগুলোয় বিভিন্ন পর্যটন স্থানে ভিড় করছেন। সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সভা-সমাবেশেও যেতে শুরু করেছেন। সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না। অনেকে মাস্কও ব্যবহার করছেন না।
এসব কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখনও কাউকেই দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়নি। এক ডোজ টিকা কখনওই সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা দেয় না। দুই ডোজ টিকা দেয়ার ১৪ দিন পরে প্রতিরোধ ক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, শুক্রবার( ৫মার্চ )পর্যন্ত দেশে মোট করোনার টিকা নিয়েছেন ৩৫ লাখ ৮১ লাখ ১৬৯ জন। এর মধ্যে ৪ মার্চ এক দিনে টিকা নিয়েছেন এক লাখ ২১ হাজার ১০ জন। মোট টিকাগ্রহীতার পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৬ জনই ঢাকা মহানগরীর।
এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা, ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা জরুরি। সেই সঙ্গে দ্রুত করোনাভাইরাস পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ