মৃণাল মজুমদার, বার্লিন : ডিজিটাল মুদ্রা সব দেশ সৃষ্টি করবে! স্মার্ট ফোন, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড, ট্রান্সপন্ডার, বায়ো মেট্রিক ছাপ ও নানা apps এর মাধ্যমে মানুষ লেন দেন করবে! কোনো এটিএম থাকবেনা, ব্যাঙ্ক ও এই ফর্মে থাকবেনা। ক্যাশ টাকা ছাপানো, বন্টন, রক্ষনাবেক্ষন, অনেক খরচের। যদি ক্যাশ টাকা আরও ৩০ বছর কোনো দেশে টিকেও থাকে, ক্যাশ টাকায় কেনাকাটি করতে হয়ত ৫-১৫% অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে।
ডিজিটাল মুদ্রার ভালো দিক হলো, কে কাকে ঘুষ দিলো, কে কত আয় করলো জানা যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো যদি আমাজন ডিজিটাল মুদ্রা , ফেসবুক ডিজিটাল মুদ্রা, গুগল ডিজিটাল মুদ্রা বা বিট কয়েন – মানে কর্পোরেট ক্রিপ্টো মুদ্রাতে লেন দেন হয়। কারণ সেই খবর প্রাইভেসী আইন দেখিয়ে এরা সরকার কে জানাবেনা , দুর্নীতি চলতেই থাকবে, আরও বড় আকারে হবে। আর ক্রিপ্টো মুদ্রা যেমন বিট কয়েন বানাতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগে। অর্থাৎ ক্রিপ্ট মুদ্রা হলো পরিবেশ শত্রু – মাংসের মত। আর একাউন্ট হ্যাক করা সহজ, মুহূর্তের মধ্যে কলকাতার রাম এর টাকা পেরু’র মাইকেল এর একাউন্ট এ ঢুকে যাবে, আর জানলেও ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়, কারণ মামলা মোকদ্দমার শেষ কোনো দিন হবেনা! বাংলাদেশ ব্যাংক এর হ্যাক হওয়া টাকা সরকার উদ্ধার করতে পারেনি, আপনি আমি কি করে পারবো?
এক সময় ডিজিটাল মুদ্রা বাতিল হবেই। কারণ কম্পিউটার বুঝে শূন্য আর এক। এই এক তো এই শূন্য! বিশেষ করে সৌরঝড়ের ম্যাগনেটিকরে কম্পিউটার এর হার্ড ডিস্ক এর সব ইনফরমেশন মুছে দিতে পারে, যদিও এই সব সার্ভার পাহাড়ের ভিতরের সুড়ঙ্গে থাকবে। টাকা বা কাগুজে মুদ্রা উৎপাদন বেশ দামী ও নকল হয়। কিন্তু ডিজিটাল মুদ্রা আরও বেশি দামী। এই মুদ্রা নকল না হলেও, মূল্যহীন হতে পারে বা একাউন্ট ফাঁকা হয়ে যেতে পারে। IT স্পেশালিস্ট হলেও IT র সব জানা যায়না, মানুষ কি করে শূন্য এক জগতে টিকে থাকবে? ফেসবুক, গুগলদের দয়ায় কি মানুষ বাঁচতে চাইবে? এরা আমাদের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। এক মুদ্রা -নানা দেশ -নানা আইন বাস্তব কি? আর ডিজিটাল মুদ্রা বানাতে গিয়ে এনার্জি মূল্য কয়েকগুন বাড়বে!
ক্যাশ টাকায় লেনদেন করলে যেমন হিসাব থাকে , পকেট ফাঁকা কিনা চোখে পড়ে, অন্যভাবে লেনদেন করলে সেই হিসাব মানুষ রাখেনা। মানুষ খরচ করে বেশি। মনোবিদদের সাথে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রি আমাদের কে নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে। ৫০ বছর পর ১০০% মানুষ কন্ট্রোলে আসবে ইন্টারনেট এর।
আমি নিজে টেকনোলজির সব সুবিধা ভোগ করেও, এই নির্ভরতার কুফল সমন্ধে সচেতন, কিন্তু ধ্বংস সেটাই হয়, যা সৃষ্টি হয়। আমরা আবার হয়ত টেকনোলজি ব্যবহার এর কুফল বুঝে, আবার নতুন করে প্রকৃত সম্পর্ক সৃষ্টি করবো- ভার্চুয়াল জগৎ ছেড়ে, মুদ্রা, টাকা আবিষ্কার করবো! হাত দিয়ে যা স্পর্শ করা যায়না, তার প্রতি কি আবেগ থাকে?
আমি ফেসবুক, গুগলদের দয়ায় বাঁচতে চাইনা। মডার্ন দেশ জগৎ সিস্টেম আমি ভোগ করার পর এটা বিশ্বাস করি , বাল্যকালের টেকনোলজি বিদ্যুৎহীন আমার গ্রাম্য জগতে প্রকৃত সুখ শান্তি বেশি ছিল! সেই জগৎ কি করলে আবার ফিরে পাবো?
আপনার মতামত জানানঃ