রাশিয়ার স্পুটনিক ভি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রায় ৯২ শতাংশ কার্যকর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা এখন প্রমাণিত। বিশ্ববিখ্যাত পিয়ার রিভিউ জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে, ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটি নিরাপদ বলে গণ্য হয়েছে এবং কোভিডের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটি সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিচ্ছে। চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের আগে প্রয়োগ শুরু হওয়ায় প্রাথমিকভাবে ভ্যাকসিনটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
রাষ্ট্র পরিচালিত ভাইরোলজি গবেষণা কেন্দ্র রাশিয়ার গামলেয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক আলেকজান্ডার গিন্সবুর্গ বলেছেন যে, ফলাফলগুলি স্মৃতিতে থেকে যাওয়ার মতো সাফল্য এবং বিশ্বজোড়া কোভিড-১৯ মহামারীটির বিরুদ্ধে এটি দুর্দান্ত সাফল্য। ৬০ বছরেরও বেশি বয়স্ক প্রায় ২ হাজার মানুষের মধ্যে এই পরীক্ষা করা হয়েছিল। তখনই জানা যায় ভ্যাকসিনটি সমানভাবে কার্যকর।
রাশিয়ার ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রমাণ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের আগে আরও বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন এই ধাপ অতিক্রম করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ফাইজার, অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না এবং জ্যানসেন ভ্যাকসিন।যুক্তরাজ্যের প্রস্তুত করা অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং বেলজিয়ামে উদ্ভাবন করা জ্যানসেনের টিকা যেভাবে কাজ করে সেই একইভাবে কাজ করে রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিন। কোল্ড-টাইপ ভাইরাস ব্যবহার করে এটি করোনাভাইরাসের শরীরে ছোট একটি টুকরা ঢুকিয়ে দেয়। টিকা নেওয়ার পর শরীর করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি উৎপাদন শুরু করে দেয়।
যুক্তরাজ্যে ডেভেলপ করা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এবং বেলজিয়ামে ডেভেলপ করা জানসিন ভ্যাকসিনের মতো পদ্ধতিতেই রাশিয়ার এই ভ্যাকসিনটিও ডেভেলপ করা হয়েছে। রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিনটি ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মজুদ করা যায়, সেই কারণে এটি সহজে পরিবহন এবং মজুদ করা যায়। সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার থাকলেও সেগুলো হাতে ব্যাথা, ক্লান্তি এবং সামান্য তাপমাত্রা বাড়ার মতো সাধারণ বিষয়। ভ্যাকসিন গ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে মৃত্যু এবং মারাত্মক অসুস্থতার কোনও বিষয় নেই।
দ্য ল্যানসেটের ওই গবেষণা নিবন্ধে গামালেয়া ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেনিস লোগুনভের নেতৃত্বে গবেষকরা বলেন, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ১৯ হাজার ৮৬৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। শেষধাপের ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশের আগে টিকাটি প্রয়োগ শুরু করায় নানা ধরনের বিতর্কের তৈরি হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রুশ টিকার কার্যকরিতা এবং নিরাপত্তা এখন সবার সামনে।
রাশিয়া ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশ স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিনটি ব্যবহার শুরু করেছে। আর্জেন্টিনা, ফিলিস্তিনি অঞ্চল, ভেনেজুয়েলা, হাঙ্গেরি, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ইরানে এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ভাইরোলজির অধ্যাপক ইয়ান জোনস এবং রিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইরাসোলজি প্রফেসর বলেছেন, মিঃ পুতিনের কার্যকারিতা দাবির ব্যাক আপ হিসেবে রাশিয়ার কাছে এখন বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে। এখানে বর্ণিত ফলাফলগুলি পরিষ্কার এবং টিকা দেওয়ার বৈজ্ঞানিক নীতিটি প্রদর্শন করা হয়েছে। এর অর্থ এখন কোভিড-১৯ এর ঘটনা কমানোর লড়াইয়ে যোগ দিতে পারে আরও একটি ভ্যাকসিন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্পুটনিক ভি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের পর তড়িঘড়ি করা এবং স্বচ্ছতার অভাবের জন্য সমালোচিত হয়েছে। তবে যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত স্পষ্ট এবং ভ্যাকসিনের বৈজ্ঞানিক মূলনীতি প্রতিফলিত হয়েছে। ভ্যাকসিনটি সব বয়সী মানুষের ওপরই ভালো প্রভাব দেখিয়েছে এবং মারাত্মক অসুস্থতার ঝুঁকি কমিয়েছে।
এসডব্লিউ/ এফএ/১৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ