করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্বে প্রাণহানি এখনো থামছেই না। ভাইরাসটি এখনো তাণ্ডব চালাচ্ছে সারাবিশ্বে। অদৃশ্য ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ মারা যাচ্ছে। বসন্তের শুরুতে নভেল করোনাভাইরাসের ব্রিটিশ স্ট্রেইন আরও শক্তিশালী হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি।
ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৮টি অঙ্গরাজ্যে পাওয়া গেছে এবং এখন পর্যন্ত ৩১৫ জনের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ড. অ্যান্থনি ফাউচি। তিনি বলেন, মূল স্ট্রেইনের চাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার করোনাভাইরাস স্ট্রেইন আরও বেশি সংক্রামক ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাব বিস্তার করবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। সত্যিকার আশঙ্কা হলো ব্রিটিশ ভ্যারিয়েন্ট মার্চের শেষ ও এপ্রিলের শুরুর দিকে আরও শক্তিশালী হবে।
নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনার বৈজ্ঞানিক নাম ভিওসি ২০২০১২/০১। ব্রিটেন চিহ্নিত হওয়া ধরন বলেই লোকে একে বেশি চেনে। মাসখানেক আগে ব্রিটেনে প্রথম চিহ্নিত হয়েছে করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন। সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে প্রথম এই স্ট্রেইন শনাক্ত হয়। পরে দ্রুত তা যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যেই তা বিশ্বের ৭০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনটাই জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও)।
বিজ্ঞানীদের একাংশের আশঙ্কা, নতুন স্ট্রেনগুলির ক্ষেত্রে বাজারে আসা করোনা প্রতিষেধকগুলি একই ভাবে কার্যকর না-ও হতে পারে। এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন দাবি করেছেন, প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে তিনি আরও জানিয়েছেন, ব্রিটেনে যে দুটি টিকা প্রয়োগ চলছে, তা এই নতুন ভ্যারিয়েন্টকে মোকাবিলা করতে সক্ষম।
যুক্তরাজ্য এ পর্যন্ত জরুরি ব্যবহারের জন্য তিনটি করোনভাইরাস ভ্যাকসিন অনুমোদন করেছে – একটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কভিশিল্ড, দ্বিতীয়টি ফাইজার এবং বায়োএনটেকের তৈরি এবং তৃতীয়টি ওষুধ কোম্পানি মডার্নার তৈরি। অন্যান্য কভিড ভ্যাকসিনের মতো নোভাভ্যাক্সেরও পূর্ণ মাত্রার দুটি ডোজ স্বেচ্ছাসেবীদের দেয়া হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের তৃতীয় চূড়ান্ত ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ধাপে ভ্যাকসিনটি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কভিড ১৯ প্রতিরোধে ৮৯ দশমিক ৩ শতাংশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রাণঘাতী ভাইরাসটির থাবায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা ২ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ১৯৩ জন। দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৪৫৯ জন।
লকডাউনের মধ্যেও লন্ডনে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমার কোনো লক্ষণ নেই। রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে ব্যাপক ভীড়। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উপচে পড়ছে করোনা রোগী। সে দেশের হাসপাতালগুলোতে কোথাও ১৬ জনের শয্যায় রাখা হয়েছে ৩০ জনকে। আবার কোথাও শয্যার অভাবে রোগী ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে মৃত্যুর মিছিল তো রয়েছেই।
জানুয়ারির মাঝামাঝি শ্বাসকষ্ট ও করোনা লক্ষণ নিয়ে লন্ডনের কিংস কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন জাস্টিন ফ্লেমিং। দিন পনের মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ঘরে ফেরা বছর সাতচল্লিশের ফ্লেমিং বারবার ধন্যবাদ দিয়েছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের। জানালেন, হাসপাতালে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলায় সকলে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াই করছেন। এদের মধ্যে কেউ প্রবীণ চিকিৎসক, কেউ সদ্য পাশ করা। কেউ দাঁতের ডাক্তার, কেউবা মস্তিষ্কের। সকলেই করোনা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়ের বিষয় একটাই, উহানে চিহ্নিত হওয়া পুরনো করোনা স্ট্রেনটির থেকে এটি অনেক বেশি সংক্রামক। বহু ক্ষেত্রে তা দ্বিতীয় সংক্রমণের কারণ হিসেবেও ধরা পড়েছে। পাশাপাশি, দক্ষিণ আফ্রিকায় চিহ্নিত করোনার নয়া স্ট্রেনের খোঁজ মিলেছে অন্তত ৩১টি দেশে।
মহামারির শুরুর পর থেকে বিশ্বের সব দেশ ও অঞ্চলের করোনা সংক্রমণের তথ্য হালনাগাদ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, শনিবার সকাল নাগাদ বিশ্বে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৩ জন। একই সময় নাগাদ বিশ্বে করোনায় মোট মারা গেছেন ২২ লাখ ১৬ হাজার ২৮৫ জন। করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের সংখ্যা ৭ কোটি ৪৩ লাখ ২৯ হাজার ৪২৭ জন।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে অদৃশ্য ভাইরাসটি। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা প্রদান শুরু করেছে। বাংলাদেশেও করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এফএ/১৬২৫
আপনার মতামত জানানঃ