ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে নিজেকে একাধিকবার শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে হোয়াইট হাউসে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার সময় তিনি দাবি করেছিলেন যে, তিনি ছয়টি যুদ্ধ শেষ করেছেন এবং যুদ্ধবিরতির পরিবর্তে স্থায়ী শান্তি চুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে এসব দাবি যাচাই করলে বাস্তবতার সঙ্গে বড় ধরনের অমিল দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি যুদ্ধবিরতিকে শান্তি চুক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে তার ভূমিকা আদৌ ছিল না।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক তার আমলে আরও উত্তপ্ত হয়েছিল। ইরানি সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর ইরানকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করা হয়। এটিকে তিনি শান্তি চুক্তি হিসেবে দেখালেও বাস্তবে তা ছিল সাময়িক বিরতি। ডিআর কঙ্গো ও রুয়ান্ডার ক্ষেত্রে তার প্রশাসন শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবি করলেও, বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর লড়াই দোহা চুক্তির পরও অব্যাহত থাকে।
ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তে সংঘর্ষের সময় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হয়েছে। অথচ ভারত সরকার স্পষ্ট জানিয়েছিল, কাশ্মীর ইস্যুতে ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা নেই। একইভাবে মিশর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে নীলনদের বাঁধ নিয়ে দ্বন্দ্ব এখনো অমীমাংসিত। কোনো কার্যকর চুক্তি ছাড়াই ট্রাম্প এটিকেও নিজের সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেন।
সার্বিয়া-কোসোভোর ক্ষেত্রে আরও স্পষ্ট অসত্য দেখা যায়। সার্বিয়া জানিয়েছে, তাদের কোনো যুদ্ধের পরিকল্পনাই ছিল না। তবুও ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সম্ভাব্য যুদ্ধ ঠেকিয়েছেন। আর কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তে সংঘর্ষের পর ট্রাম্প ফোনে দুই দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে যুদ্ধবিরতি ছিল অস্থায়ী এবং এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব দেখা যায়নি।
এভাবে প্রায় প্রতিটি উদাহরণে দেখা যায়, ট্রাম্পের প্রকৃত ভূমিকা সীমিত ছিল যুদ্ধবিরতি আহ্বান করার মধ্যে। তবুও তিনি সেই ঘটনাগুলোকে শান্তি প্রতিষ্ঠার বড় সাফল্য হিসেবে দেখিয়েছেন। তার নিজের বক্তব্যও এই অসঙ্গতি প্রকাশ করে। একদিকে তিনি বলেছেন, তিনি যুদ্ধবিরতি চান না বরং স্থায়ী শান্তি চান। অন্যদিকে বাস্তবে তার প্রশাসন বারবার যুদ্ধবিরতিকে রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে প্রচার করেছে।
বর্তমানে ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প আরও জটিল অবস্থান নিয়েছেন। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি যুদ্ধবিরতির ধারণা থেকে সরে এসে এমন এক রোডম্যাপের কথা বলেছেন যেখানে রাশিয়া দখলকৃত ভূখণ্ড ধরে রাখবে। এটি ইউক্রেনের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কিয়েভ যুদ্ধবিরতির আগে দখলকৃত ভূখণ্ড ফেরত চায়, আর মস্কো বিপরীত শর্ত দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে ট্রাম্পের দাবিগুলো মূলত রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ বলে প্রতীয়মান হয়। যুদ্ধবিরতি, অস্থায়ী বিরতি কিংবা ব্যর্থ আলোচনাকে তিনি শান্তি চুক্তির মতো উপস্থাপন করেছেন। বাস্তবে এই দাবিগুলো অতিরঞ্জিত, বিভ্রান্তিকর এবং অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি ভুল। তার প্রচেষ্টা হয়তো কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনা কমিয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
আপনার মতামত জানানঃ