আমরা কতটা বিশেষ? একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর ধরণের জীববিজ্ঞান হতে পারে খুবই বিরল, এবং পৃথিবী হতে পারে এমন একটি প্রথম উদাহরণ, যেখানে প্রাণ টিকে থাকার মতো পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যদিও আমরা মহাবিশ্বের নতুন আগন্তুক, তথাপি মনে হচ্ছে, বিগ ব্যাং-এর পর থেকে সৃষ্ট বুদ্ধিমান জীবগুলোর মধ্যে আমরা অন্যতম অল্পসংখ্যক উদাহরণ।
হার্ভার্ডের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আভি লোয়েব এবং যুক্তরাজ্যের তার সহকর্মীরা যুক্তি দিয়েছেন, জীবনের স্বর্ণালী যুগ এখনো সামনে। মহাবিশ্বে এখনো ভোর হয়নি—এটি একেবারে ভোরের আগের সময়। ভবিষ্যতে সম্ভবত অসংখ্য গ্রহে ঘাসের মতো করে জীবন ছড়িয়ে পড়বে, তবে সেটি হবে এখন থেকে আরও বহু বিলিয়ন বছর পরে।
বাস্তবতা হলো, আপনি এখন এটা পড়ছেন—আপনি, সেই অণুজীবদের উত্তরসূরি, যারা চার বিলিয়ন বছর আগে নিজের মতো করে অনুরূপ কপি তৈরি করার এক দুর্দান্ত কৌশল আবিষ্কার করেছিল। বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন, এই কৌশল ছিল নিছকই এক দৈব ঘটনা, না কি এটি আরও সাধারণ কোনো প্রক্রিয়া—এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
লোয়েব ও তার সহকর্মীদের যুক্তি জীববিজ্ঞানের নয়, বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। তাদের ধারণা, জীবনের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান দরকার—একটি গ্রহ, যেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়া সহজে হতে পারে, যেখানে তরল পানি আছে, ঘন বায়ুমণ্ডল আছে—যা আমরা সাধারণত ‘গোল্ডিলকস গ্রহ’ বলি। এখন পর্যন্ত যতদূর জানা যায়, এই ধরনের পৃথিবীসদৃশ গ্রহের কোনো ঘাটতি নেই—শুধুমাত্র আমাদের গ্যালাক্সিতেই এমন গ্রহের সংখ্যা হতে পারে কয়েক বিলিয়ন, যা এমনকি বাসযোগ্য চাঁদগুলোকেও ছাড়িয়ে যায়।
তবে শুধু জায়গা থাকলেই হবে না, সময়ও দরকার। বিশেষ করে বুদ্ধিমান প্রাণ তৈরি করতে হলে কয়েক বিলিয়ন বছর সময় লেগে যায়।
তাদের যুক্তি সরল: আপনি যত বেশি সময় অপেক্ষা করবেন, জীবনের উদাহরণ তত বেশি পাওয়া যাবে। কিন্তু সূর্যের মতো তারাগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, তাদের সময় সীমিত। প্রায় ১০ বিলিয়ন বছরের মধ্যে তারা তাদের জ্বালানী শেষ করে ফেলে এবং নিভে যায়।
এখানেই আসে লাল বামন তারাদের কথা—এরা সূর্যের তুলনায় অনেক ছোট এবং ধীরে জ্বলে। তাই তারা সূর্যের চেয়ে হাজার গুণ বেশি সময় ধরে আলো দেয়। এর মানে, একটি লাল বামন তারা তার শক্তি দিয়ে জীবনের বিকাশ ঘটাতে সূর্যের তুলনায় হাজার গুণ বেশি সম্ভাবনাময়।
এগুলো এখনো তরুণ, তাই ভবিষ্যতে এদের দীর্ঘ পরিণত বয়সে প্রাণ বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আর এই তারাগুলোর সংখ্যাও অনেক—সমস্ত তারার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই হলো লাল বামন। অর্থাৎ সংখ্যায়ও এরা বেশি, আবার প্রত্যেকেই আলাদাভাবে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়।
লোয়েব বলেন, যদি কেউ দশ ট্রিলিয়ন বছর পর মহাবিশ্বের দিকে ফিরে তাকায়, সে দেখতে পাবে জীবনের অধিকাংশই বিকশিত হয়েছে লাল বামন তারাগুলোর চারপাশে, এবং পৃথিবীর মতো গ্রহগুলোর তুলনায় অনেক দেরিতে।
এই হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবী জীবনের ‘মূল স্রোত’-এর আগে চলে এসেছে। ভবিষ্যতের কোনো গ্রহবাসীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, আমরা হই সেই “প্রাচীন এলিয়েন”, যারা অনেক আগেই অস্তিত্বে ছিলাম।
তবে এটা কি এতটাই বিস্ময়কর? হয়তো না। রোমান সাম্রাজ্যের সময় একজন নাগরিক যদি ভাবতেন, ভবিষ্যতের জনসংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে, তা হলে কি তিনি বিশেষ ছিলেন? তখন পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ কোটি। আজ তার চেয়ে ৩৫ গুণ বেশি মানুষ রয়েছে।
তাতে কি রোমানরা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? হয়তো তারা আগে জন্মেছিল, কিন্তু তারা ছিল না প্রথম মানুষ, বা এমনকি প্রথম সভ্যও নয়। তাদের আগে ছিল অন্তত দশ হাজার প্রজন্মের হোমো সেপিয়েন্স, যারা তাদের থেকেও অনেকটা পথ পারি দিয়েছিল।
তাই, এখনই অনুসন্ধান চালানো জরুরি। গ্যালাক্সিতে ভবিষ্যতের প্রাণের সম্ভাবনা যতই থাকুক না কেন, তা আমাদের এখনকার অনুসন্ধান থামানোর কোনো কারণ নয়। আপনি কি ৫০০ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে রাজি আছেন জানতে যে, আমরা কি একা? আমার ধৈর্য এতটা নয়।
আপনার মতামত জানানঃ