নৃশংস ও ‘বর্বরভাবে’ আবারো গাজার নিরীহ মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করেছে ইসরাইল। ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি এতে ভেঙেচুরে খান খান হয়ে গেছে। নতুন করে ইসরাইলের হামলায় কমপক্ষে ৪০৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আশঙ্কা করছে হতাহতের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। কারণ, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। ইসরাইলের এ হামলাকে বর্বর বলে আখ্যায়িত করেছে মাল্টা। দ্রুত নতুন করে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে মাল্টা, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড।
মাল্টার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট আবেলা এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, বর্বরোচিতভাবে কমপক্ষে ৩০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলের নতুন করে হামলা এবং তাতে ভয়াবহভাবে মানুষ হত্যার কড়া সমালোচনা করেছেন বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাক্সিম প্রেভোট। তিনি এক্সে লিখেছেন, সব পক্ষকে আমি যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়কে বাস্তবায়নের আহ্বান জানাই। এটা পুনর্গঠন এবং সবার জন্য শান্তির পথ তৈরি করে দেবে। বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষিত রাখার বাধ্যবাধকতার কথা ইসরাইলকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর থেকে গাজায় ইসরাইলের ভয়াবহ বিমান হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক। তিনি বলেছেন, সোমবার দিবাগত রাতে গাজায় ইসরাইল যে ভয়াবহ বিমান হামলা ও গোলা নিক্ষেপ করেছে তাতে আমি ভয়ার্ত। ওই হামলায় কয়েক শত মানুষ নিহত হয়েছেন। এটা একটা ট্রাজেডির ওপর আরেকটা ট্রাজেডি।
এই হামলাকে গাজায় গণহত্যার নতুন দফা বলে কড়া নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজায় ইসরাইলের হামলায় শত শত মানুষকে গণহত্যা এটাই দেখিয়ে দেয় যে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের গণহত্যার পলিসি নতুন দশায় প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন এবং সার্বজনীন মূল্যবোধকে লঙ্ঘন করে চলেছে ইসরাইল। এই হামলাকে গণহত্যা আখ্যায়িত করে এর পূর্ণাঙ্গ দায় যুক্তরাষ্ট্রের বলে অভিযোগ করেছে গাজার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস।
হামাস বলেছে, তারা আমাদের জনগণকে নির্মূল করতে সরাসরি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এসব করছে। দখলদারদের প্রতি সীমাহীন রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন রয়েছে ওয়াশিংটনের। এ জন্য এই গণহত্যার দায় তাদেরকে বহন করতে হবে। এহেন কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যায়িত করেছে হামাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা।
উল্লেখ্য, মুসলিমদের পবিত্র রমজানে যখন সর্বোচ্চ সংযমের চর্চা করছেন রোজা পালনের মধ্যদিয়ে, তখন সেই নিরীহ, অসহায় মানুষের ওপর ইসরাইল নৃশংস হামলা চালাচ্ছে। একদিকে তাদের সব মানবিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে গাজাবাসীকে তাদের বিধ্বস্ত বাড়িঘরে ফেরার অনুমতি দিয়েছে। এরপরই রোজা পালনরত সেই সবহারা মানুষগুলোর ওপর হায়েনার মতো হামলা চালাচ্ছে তারা। যেন, সবাইকে একত্রিত করে তাদেরকে হত্যা করে গাজাকে ফাঁকা করে ফেলতে চাইছে।
সারা বিশ্বের মুসলিমরা যখন ধর্মীয় নির্দেশনা পবিত্র রোজা পালন করছেন, তখন গাজায় তাদের চোখের সামনে অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন তাদেরই ভাইবোন। সারা বিশ্ব দেখছে। কিন্তু কারও যেন কিছু করার নেই। সবাই চুপ। এই ফাঁকে গাজাবাসীর রক্তে সেখানকার মাটি লাল হয়ে যাচ্ছে। গাজার কেন্দ্রীয় এলাকা দিয়ের আল বালা থেকে সাংবাদিক হিন্দ খোদারি বলছেন, ইসরাইলের হামলায় গাজায় আবার অমানবিক এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে আহতদের উপচেপড়া ভিড়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফিলিস্তিনিদের প্রতি রক্তদানের আহ্বান জানাচ্ছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে এমনিতেই আহতদের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব রয়েছে। যেমন গজ, বেদনানাশক প্রভৃতি। ১৮ দিন ধরে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরাইল কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকরা এমন পরিস্থিতিতে বলছেন, তারা বড় রকম চ্যালেঞ্জের মুখে। এ ছাড়া জ্বালানি সংকটে সব মেডিকেল স্থাপনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে ইসরাইলকে চাপ দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেনেভায় ব্রিফিংয়ে রেড ক্রসের মুখপাত্র তোমাসো দেলা লোঙ্গা বলেছেন, গাজা জুড়ে মেডিকেল স্থাপনাগুলোতে রোগীতে ভরে যাচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফিলিস্তিনে শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের এজেন্সি ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সোমবার দিবাগত রাতভর ইসরাইলি বাহিনী গাজায় ভারী বোমা হামলা করেছে। এতে বহু শিশুসহ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। এই যুদ্ধ শুরু করার মাধ্যমে পৃথিবীতে নরক সৃষ্টিতে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই যুদ্ধবিরতিতে ফিরতে হবে।
আপনার মতামত জানানঃ