একটি তারার বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য সেখানে পানি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব গ্রহে তরল পানির জন্য যথেষ্ট উষ্ণতা রয়েছে।
কয়েক শ’ কোটি বছরের মধ্যে মরে যাবে আমাদের সূর্য। প্রথমে একটি লাল দৈত্যাকার পর্যায়ে প্রবেশ করবে এটি। এরপর পৃথিবীর কক্ষপথ আকারে ফুলে উঠবে, আর এর বাইরের বিভিন্ন স্তর ছড়িয়ে পড়বে মহাকাশে।
শেষে সূর্যের কেন্দ্রটি হয়ে উঠবে একটি শ্বেত বামন। এভাবেই সমাপ্তি ঘটবে সূর্যের। সব ধরনের মাঝারি আকারের তারা’র ভাগ্যেই রয়েছে শ্বেত বামন দশা। তারার শেষ পরিণতি এটি। শ্বেত বামন গ্রহে প্রাণ টিকে থাকার কোনও সম্ভাবনা থাকে না এবং এগুলো কখনও বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে না।
তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, সব শ্বেত বামন গ্রহের ভাগ্য এমন প্রাণহীন বা বসবাসের অনুপযোগী নাও হতে পারে।
শ্বেত বামন তারা’কে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এমন এক ডজনেরও বেশি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে নাসা। এমন ঘটনা পরিচিত বিভিন্ন এক্সোপ্ল্যানেটের একটি ছোট অংশজুড়ে হলেও এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, সূর্যের মতো তারা’র লাল দৈত্য পর্যায়ে বেঁচে থাকতে পারে এসব গ্রহ।
বসবাসে উপযোগী অঞ্চলে থাকা যে কোনও গ্রহ’ই একসময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু শ্বেত বামন গ্রহ তাদের জীবনকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করতে পারে।
শ্বেত বামনরা নিউক্লিয়ার ফিউশনের মধ্য দিয়ে না গেলেও এগুলো কোটি কোটি বছর ধরে উষ্ণ থাকতে পারে। তরুণ শ্বেত বামনের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ হাজার কেলভিন বা তারও বেশি হতে পারে এবং এদের ঠাণ্ডা হতে কয়েকশ বছর সময় লাগে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
একটি তারার বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠার জন্য সেখানে পানি থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব গ্রহে তরল পানির জন্য যথেষ্ট উষ্ণতা রয়েছে। ফলে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এ ধরনের শ্বেত বামন গ্রহে বসবাসের উপযোগী অঞ্চল থাকতে পারে।
সূর্যের প্রায় ৬০ শতাংশ ভরের একটি শ্বেত বামনের জন্য বসবাস উপযোগী অঞ্চলের কিছু অংশ প্রায় সাতশ কোটি বছর ধরে টিকে থাকবে, যা পৃথিবীতে প্রাণের বিবর্তন ও প্রাণ টিকিয়ে রাখার জন্য পযাপ্ত সময়ের চেয়েও বেশি। কারণ এর তুলনায় পৃথিবীর বয়স কেবল চারশ ৬০ কোটি বছর।
শ্বেত বামন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের জন্য কেবল উষ্ণ হওয়াই যথেষ্ট নয়। পৃথিবীতে যে ধরনের জটিল প্রাণের অস্তিত্বের দেখা মেলে, তার জন্য তারা’র আলোর বর্ণালীকে গ্রহের বায়ুমণ্ডলকে আয়নিত না করে সালোকসংশ্লেষণের মতো বিভিন্ন জিনিসের জন্য সঠিক ধরনের শক্তি সরবরাহ করতে হবে।
শ্বেত বামনের বর্ণালী দৃশ্যমান ও ইনফ্রারেড আলোকরশ্মির চেয়ে অতিবেগুনীর দিকেই অনেক বেশি থাকে। তবে গবেষকরা বলছেন, শ্বেত বামন গ্রহে আয়নাইজিং বিকিরণ তীব্র হবে না এবং সেখানকার ইউভি’র পরিমাণ পৃথিবীর মতো সালোকসংশ্লেষণের পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে।
শ্বেত বামন গ্রহ প্রাণের আবাসস্থল হতে পারে। তবে এর মানে এই নয় যে, সেখানে প্রাণ টিকে থাকতে পারবে। সূর্যের মতো বিভিন্ন তারার আশপাশে প্রাণের অস্তিত্ব থাকলেও শ্বেত বামনের বেলায় এমনটি সত্যি হতে পারে, তা বলার জন্য আরও স্পষ্ট প্রমাণ প্রয়োজন গবেষকদের। সূত্র: বিডিনিউজ২৪।
আপনার মতামত জানানঃ