সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুবির কুমার দাস’র ক্ষমতার অপব্যবহারমূলক গুণ্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন গ্রামবাসী। আজ শুক্রবার(২২জানু) বেলা ১১টায় তার অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বগুড়ার শেরপুরের সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেটখৈর গ্রামের নারী পুরুষেরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।
জানা যায়, গত ২রা ডিসেম্বর রায়গঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তার অফিসিয়াল স্টাফসহ শেরপুর উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের বেটখৈর গ্রামে অনুপ্রবেশ করে বেটখৈর মৌজার করতোয়া (ফুলজোড়) নদীর তীরবর্তী জমি পরিদর্শনে আসেন। এসময় ওই ভূমি কর্মকর্তা স্থানীয় লোকজনদের গাছ কাটতে বলেন এবং গাছে বাঁধা গরু সরিয়ে নিতে বলেন। এ পর্যায়ে স্থানীয় বেটখৈর গ্রামের রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত গরু খামার ব্যবসায়ী আবুল কাশেমের ছোট ছেলে আহসান হাবিব গাছ কাটা এবং গরু সরিয়ে নেয়ার কারণ জানতে চান এবং বলেন এই জায়গা বগুড়ার শেরপুরের। এছাড়া এই জায়গা নিয়ে হাইকোটে রিট মামলা রয়েছে বলেও জানান। এতে ওই কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং ওই কর্মকর্তার সঙ্গে আসা লোকজন আহসানকে ধরে টানা হেঁচড়া করতে থাকে। এ পর্যায়ে আহসানের মা সহ অন্য ভাই ঘটনাস্থলে আসলে ওই কর্মকর্তা পরিচয় জানতে পারেন। তখন এসব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বাড়িতে চা পানে দাওয়াত দেন। ভূমি কর্মকর্তা অন্য একদিন আসবেন বলে রায়গঞ্জে ফিরে যান।
পরে ওই ভূমি কর্মকর্তা রায়গঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন। ওইদিন বিকেলে রায়গঞ্জ থানা থেকে ১০জন পুলিশ আসে শেরপুরের বেটখৈর গ্রামে। স্থানীয় লোকজন পুলিশকে ঘটনাস্থল দেখান এবং ঘটনার বিবরণ দেন। পুলিশ মুখে বলে তেমন কোন ঘটনা না কিন্তু পরবর্তীতে ফিরে যাওয়ার সময় আহসান হাবিবের সেজো ভাই আরিফুল ইসলামকে জোরপূর্বক ধরে তুলে নিয়ে যায় এবং আরিফুলের আত্মীয় স্বজনদের বলা হয়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্যারের সঙ্গে আপনারা দেখা করেন।
এদিকে আরিফুলের আত্মীয় স্বজন গ্রামের ২/১ মরুব্বীদের নিয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদে যায়। কিন্তু মধ্যেই আরিফুল ফোন করে বলে থানায় আসার দরকার নেই। ঠিক সেই মূহুর্তে উপজেলা পরিষদের অদুরে আরিফুলের আত্মীয় স্বজনদের উপর হামলা চালনা হয়।
এরমধ্যে রায়গঞ্জ উপজেলা পরিষদে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে আরিফুলকে ২মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া আবুল কাশেমের দ্বিতীয় পুত্র তারিকুল ইসলাম রংপুর কারমাইকাল কলেজের প্রভাষক ও কনিষ্ঠ পুত্র আহসান হাবিব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যায়নরত। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছেন রায়গঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বেটখৈর গ্রামের নারী পুরুষ। রায়গঞ্জে সহকারী কমিশনারের ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে এবং দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু ওই ভূমি কর্মকর্তা নিজের আক্রোশ চরিত্রার্থ করতে একের পর এক ক্ষমতার অপব্যহার ও স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশ আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসাতে ক্ষমতার এমন অপব্যবহার কিছু দিন পর পরই সামনে আসে। ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা মেটানো স্বাভাবিক কর্মে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন তারা। ভূমি কমিশনারের এমন স্বেচ্ছাচারিতাই প্রমাণ করে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার কেন্দ্রিকতায় সরকারি অফিসাররা কেমন গুণ্ডা হয়ে উঠেছে। নিজেদের ব্যক্তিগত ক্ষোভ, রেশ, প্রতিহিংসা মেটানোর প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে তাদের ক্ষমতা। একের পর এক ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সন্ত্রাস কিংবা গুণ্ডা লালনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। তারা মনে করেন, সরকারি অফিসারদের গুরুতর অপকর্মের অভিযোগে লঘু শাস্তি দিয়ে মীমাংসা করার নীতি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের আরো বেপরোয়া করে তুলেছে। সর্বোচ্চ বদলি কিংবা সাসপেন্ড পর্যন্ত তাদের শাস্তি সীমাবদ্ধ থাকে বলে তাদের যেকোনো গুণ্ডামি কিংবা অপরাধ প্রবণতা কমে আসছে না। এবিষয়ে সরকারের উর্ধবতন কর্তৃপক্ষকের সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং একইসাথে ভূমি অফিসারের গুণ্ডামির বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর প্রতিবাদকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা একইসাথে দাবি করেছেন, নিজ কর্ম এরিয়া টপকে অন্যত্র মামলাধীন জমির ওপর ভূমি কমিশনার কোন হেতুতে গেলেন এবং গুণ্ডামি করে দখল করতে চাইলেন এবিষয়ে সুষ্ঠ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এসডব্লিউ/ডিএস/কেএইচ/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ