সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রহ করতে পারে এমন প্রাণী কোষ তৈরি করেছেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। শৈবালের ক্লোরোপ্লাস্ট প্রাণী কোষে প্রবেশ করিয়ে এই কোষ তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই ধরনের কোষ তৈরি করা আগে অসম্ভব বলে মনে করা হতো। এই নতুন পদ্ধতি কৃত্রিম টিস্যু উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে কম অক্সিজেনযুক্ত পরিবেশে।
গবেষকেরা ক্লোরোপ্লাস্টটি স্থাপনের জন্য চাইনিজ হ্যামস্টারের সিএইচও–কে ১ সেল লাইনটি নির্বাচন করেন। কারণ এই কোষ বাইরের উপাদানগুলো ক্ষেত্রে কম সংবেদনশীলতা দেখায়। এই গবেষণায় ‘Cyanidioschyzon merolae’ নামের লাল শৈবালের ক্লোরোপ্লাস্ট ব্যবহার করা হয়। এটি উষ্ণ পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম। এই শৈবালের ক্লোরোপ্লাস্টগুলো একটি বড় চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারে। অন্যান্য ক্লোরোপ্লাস্টগুলো যেখানে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে কাজ করতে পারে না, এই শৈবালের ক্লোরোপ্লাস্টগুলো শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সক্রিয় থাকতে পারে। এই বৈশিষ্ট্য প্রাণী কোষে একত্রীকরণের ক্ষেত্রে এগুলোকে উপযুক্ত করে তোলে।
বহু বছর ধরে প্রাণী কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে বাধা পাচ্ছিল বিজ্ঞানীরা। এই বাইরের উপাদানগুলো কোষে স্থাপন করলেই সাধারণত কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেঙে যেত। তবে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দলটি লক্ষ্য করেছে, সঠিক পরিবেশে এই শৈবালের ক্লোরোপ্লাস্টগুলো হ্যামস্টার কোষে ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সালোকসংশ্লেষণ কার্যকলাপ বজায় রাখতে পেরেছিল। বিজ্ঞানীরা উন্নত ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ট্র্যাক করেছে এবং দেখিয়েছে যে, এই ক্লোরোপ্লাস্টগুলো আলোর সংস্পর্শে শক্তি উৎপন্ন করতে থাকে। এই আবিষ্কার সেলুলার বায়োলজিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন যে, ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত কোষগুলো উন্নত বৃদ্ধি দেখিয়েছে, যা সম্ভবত কোষগুলোর ভেতরে অতিরিক্ত শক্তির উৎস থাকার কারণে। এই শক্তির বৃদ্ধি কোষের কার্যকলাপ এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্লোরোপ্লাস্টের কীভাবে সমর্থন দেয় তা নিয়ে আরও গবেষণার পথ উন্মোচন করে। তবে ক্লোরোপ্লাস্ট এবং প্রাণী কোষের উপাদানগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার পদ্ধতিগুলো এখনো অনাবিষ্কৃত। তবে গবেষকেরা এই বিষয়টি বুঝতে আগ্রহী।
দলটির নেতৃত্বদানকারী অধ্যাপক সাচিহিরো মাতসুনাগা বলেন, এই হাইব্রিড ‘প্ল্যানিমাল’ কোষগুলোকে জীবপ্রযুক্তিতে একটি আরও টেকসই, কার্বন-নিরপেক্ষ পদ্ধতি উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে দেখছেন গবেষকেরা। ভবিষ্যতে এই হাইব্রিড কোষগুলো দক্ষ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হয়ে উঠতে পারে।
আপনার মতামত জানানঃ