একটা সাপ যদি কেঁচোর চেয়েও ছোট, তাহলে দেখতে কেমন লাগে বলুন তো? খোদ বাংলাদেশেই এমন ছোট সাপ। গ্রামাবাংলার পুরনো দেয়ালের ভেতরে, কিংবা ইটের নিচ থেকে হঠাৎ করেই বেরিয়ে আসে এই সাপ। এর ব্রাহ্মণী সাপ। অনেকে একে পুঁয়ে শাপও বলে।
এটা বাংলাদেশ তো বটেই, পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্র সাপ। এই সাপের ইংরেজি Brahminy Blind Snake। ব্লাইন্ড মনে অন্ধ। আসলে এই আধা অন্ধ।
এর চোখ আছে। কিন্তু চোখের ওপর আছে পুরু ত্বক। তাই আমরা যেমনভাবে দেখি, এর পক্ষে সেভাবে দেখা সম্ভব নয়। এরা চোখের সাহায্যে কেবল আলো আর অন্ধকারের পার্থক্যটা বুঝতে পারে।চলাচল বা শিকার ধরার জন্য এরা ব্যবহার করে অন্য সাপের মতোই পেটের নিচের আইশ ও জিভ।
ব্রাহ্মণী সাপের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫ থেকে ১০ সেন্টিমিটার হয়। অর্থাৎ মাত্র ২ থেকে ৪ ইঞ্চি লম্বা হয় এরা।
এদের দেহ খুবই সরু এবং লম্বাটে। রং সাধারণত কালো বা গাঢ় বাদামি হয়। চামড়া চকচকে ও মসৃণ। এদের চোখ প্রায় অদৃশ্য।
ব্রাহ্মণী সাপ মাটির নিচে বাস করে। এরা সাধারণত গাছের গোড়া, ভেজা মাটি, অথবা পুরনো পাতা ও ইটের স্তূপ কিংবা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে। বাগান বা ধানক্ষেতে এদের বেশি দেখা যায়। বসতবাড়িতে চোখে পড়ে প্রায়ই।
এত ছোট সাপ। তাই এদের খাদ্য তালিকার প্রাণীগুলোও খুব ছোট। ছোট পোকামাকড়, উইপোকা, পিঁপড়া এদের প্রধান খাদ্য। এদের নাকে সংবেদনশীল একটা অঙ্গ বা সেন্সর আছে। এর সাহায্যে শিকারের সন্ধান পায়।
ব্রাহ্মণী সাপ শুধু স্ত্রী প্রজাতিরই হয়। বংশবিস্তারের জন্য পুরুষ সাপের দরকার হয় না। এরা বেশির ভাগ সাপের মতোই ডিম পাড়ে ও তা দেয়।
অনেকেই মনে করেন, এই সাপ খুব বিষধর। এর কামড়ে মানুষ মারা যেতে পারে। তাই একে দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা দেখা যায়। আসলে এই একেবারেই বিষহীন, তাই এরা মানুষের জন্য হুমকি নয়।
বরং এই সাপ পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। ফসলের জন্যও উপকারী। এরা মাটির নিচের ক্ষুদ্র জীবের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
বাংলাদেশের পরিবেশে এই সাপ খুব সাধারণ হলেও বিরল নয়। তবে এদের দেখতে পাওয়ার বিরল ঘটনা। কারণ, খুব ছোট, তাই খুব সামান্য জায়গাতেই লুকিয়ে থাকতে পারে। এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Indotyphlops braminus।
আপনার মতামত জানানঃ