ভোলার চরফ্যাশনে মধুমতি ব্যাংকের সদ্য বরখাস্তকৃত ম্যানেজার রেজাউল কবিরের বিরুদ্ধে প্রায় ১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. ইয়াসিন উদ্দিন সোহেল রেজাউল কবিরের বিরুদ্ধে চরফ্যাশন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ওদিকে রেজাউল কবির নিজের অপকর্ম ঢাকতে গতকাল বুধবার ভোলা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। নিজের দোষ ঢাকতে তিনি অন্যদের ওপর কাল্পনিক ও অবাস্তব দায় চাপানোর চেষ্টা করেন।
নতুন শাখা ম্যানেজার ব্যাংকে যোগদানের পরই টাকা লোপাটের বিষয়টি নজরে এলে তিনি থানায় জিডি করেন। পরে পুলিশ ব্যাংক শাখায় ছুটে এলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত টিমের নির্দেশে পুলিশ মূল অভিযুক্ত সদ্য বদলি হওয়া শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউল কবিরের বন্ধু মো. রাসেল, রেজাউলের ভাই মো. কবির, রাসেলের ভাই মো. মাসুদ, শ্যালক মো. সজিব, শশিভূষণ এলাকার বিএনপি নেতা মো. ফারুক ও ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার কিশোর কুমার দেবনাথকে গ্রেপ্তার করে। ঢাকায় বদলি হওয়া রেজাউল কবির গা ঢাকা দিয়েছেন। আটক ব্যক্তিদের মধ্যেই টাকা সরানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত টিমের কথা শুনেই আটক রেজাউলের স্বজনরা ব্যাংকে ছুটে এসেছিলেন।
মধুমতি ব্যাংক চরফ্যাশন শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক মো. ইয়াসিন উদ্দিন সোহেল বলেন, ব্যাংক একটি সুরক্ষিত ও বিধিবদ্ধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যাংকে ৫ হাজার টাকার অনিয়ম হলেও তা ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর বর্তায়।
তিনি আরো জানান, গত রবিবার সাবেক ম্যানেজার রেজাউলের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সমঝোতা করতে তার নিকট তার কিছু স্বজন ব্যাংকের শাখায় এসেছিলেন। তারা টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িত আছে এমন সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চরফ্যাসন থানায় সাতজনকে আটক করা হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সাবেক ব্যবস্থাপক রেজাউল কবির ও ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথ পরস্পর যোগসাজশে প্রায় ১২ কোটি টাকা ১২টি পেঅর্ডারের মাধ্যমে আত্মসাত করেন। তারা নিজেরা অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এবং ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতিসাধনের জন্য পরিকল্পিতভাবে এমন কাজ করেন।
১৪ জানুয়ারি ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার পে-অর্ডার স্টক নিরীক্ষার সময় এ অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরদিন ১৫ জানুয়ারি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ও বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইয়াছিন উদ্দিন সোহেল বাদী হয়ে চরফ্যাশন থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। এতে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউল কবির ও ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথকে আসামি করা হয়।
এদিকে, ১৫ জানুয়ারি চরফ্যাশন থানা কর্তৃপক্ষ এজাহারটি জিডি করে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে দুদক বরিশাল কার্যালয়ে প্রেরণ করে। যার জিডি নং ৫৫৯। বিষয়টি দুদক তপশিলভুক্ত হওয়ায় মামলা না করে দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া জানান, নতুন পাস হওয়া আইন অনুযায়ী টাকা আত্মসাতের মামলা গ্রহণের এখতিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনের। এ ব্যাপারে ব্যাংকের নতুন ম্যনেজার জানান, এর মধ্যে বরিশালের দুদক কার্যালয়ে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শুরু হবে।
মধুমতি ব্যাংকের বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক ইয়াছিন উদ্দিন সোহেল জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় তিনি কথা বলতে পারবেন না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে বিস্তারিত তথ্য দেবেন। এছাড়া ব্যাংকে হিসাব নিকাশের বিষয়ে অডিট চলছে বলেও জানান তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০৯
আপনার মতামত জানানঃ