ভারতীয় ধনকুবেরদের সম্পদ অর্জনের লড়াইয়ে মুকেশ আম্বানিকে হারিয়ে শীর্ষ স্থানে উঠে এসেছেন গৌতম আদানি। হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্টের সাম্প্রতিক সংস্করণ অনুসারে, সর্বশেষ এক বছরে আদানি পরিবারের সম্পদ বেড়েছে ৯৫ শতাংশ। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত তাদের সম্পদের পরিমাণ ১১ লাখ ৬১ হাজার কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে। খবর দ্য ইকোনমিক টাইমস।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে আদানি গ্রুপ। তা সত্ত্বেও ওই বছর আদানি পরিবারের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৫০৩ কোটি রুপি।
হুরুন ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিন্ডেনবার্গের অভিযোগের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ৬২ বছর বয়সী গৌতম আদানি ও পরিবার। তালিকার শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে পরিবারটি। আগের বছরের তুলনায় তাদের সম্পদ ৯৫ শতাংশ বেড়ে ১১ কোটি ৬১ হাজার ৮০০ কোটি রুপি হয়েছে।
আদানি গত পাঁচ বছরে ভারতের শীর্ষ ১০ ধনীর মধ্যে সর্বোচ্চ সম্পদ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছেন। এ সময় তিনি আয় করেছেন ১০ লাখ ২১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। গত এক বছরে আদানি গ্রুপের সব কোম্পানির শেয়ারে উল্লেখযোগ্য মুনাফার প্রভাব পড়েছে সম্পদের মূল্যে। আদানি পোর্টসের শেয়ারদর বেড়েছে ৯৮ শতাংশ। বন্দরের কার্যক্রম হালনাগাদ করার পাশাপাশি নতুন বন্দর ও কনটেইনার টার্মিনালের অধিগ্রহণ এ খাতের গ্রুপটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়িয়েছে। এছাড়া জ্বালানিভিত্তিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর গড়ে ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।
মার্কিন আর্থিক কোম্পানি এমএসসিআই সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় আদানি গ্রুপের সিকিউরিটিজের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, যা আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি পোর্টস ও অম্বুজা সিমেন্টের মতো গ্রুপের প্রধান অংশীদারদের স্থিতিশীল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
হিন্ডেনবার্গ পুঁজিবাজারে কারসাজির অভিযোগ আনলে আদানির শেয়ারদর অর্ধেকে নেমে যায়। তবে চলতি বছরের মে নাগাদ ঘুরে দাঁড়ায়। এরপর চলতি মাসে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়ার (এসইবিআই) তদন্তের মাঝে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির চেয়ারপারসনকে জড়িয়ে নতুন অভিযোগ এনেছে হিন্ডেনবার্গ।
গুজরাটি এ পরিবার ২০২০ সালে হুরুনের তালিকায় চতুর্থ স্থান লাভ করে। এরপর শীর্ষ স্থানে পৌঁছতে পৌঁছতে পরিবারটির সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট গুণ। আদানি পরিবারের পর তালিকার শীর্ষে থাকা মুকেশ আম্বানি পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি রুপি। এক বছরে আম্বানিদের সম্পদ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ৩ লাখ ১৪ হাজার কোটি রুপির সম্পদ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এইচসিএলের শিব নাদার ও পরিবার।
ভ্যাকসিন কিং হিসেবে পরিচিতি সাইরাস এস পুনাওয়ালা রয়েছেন হুরুনের সম্পদশালী ভারতীয়ের তালিকায় চতুর্থ স্থানে, তার সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ কোটি রপি। তালিকার অন্য বিলিয়নেয়ারদের মধ্যে রয়েছে দিলীপ সাংভি (২ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ রুপি), কুমার মঙ্গলম বিড়লা (২ লাখ ৩৫ হাজার ২০০), হিন্দুজা পরিবার (১ লাখ ৯২ হাজার ৭০০ কোটি), রাধাকৃষান দামানি (১ লাখ ৯০ হাজার ৯০০ কোটি), আজিম প্রেমজি (১ লাখ ৯০ হাজার ৭০০ কোটি) ও নীরজ বাজাজ পরিবার (১ লাখ ৬২ হাজার ৮০০ রুপি)।
হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট অনুসারে, বর্তমানে ভারতে ১ হাজার ৫৩৯ জনের সম্পদের মূল্য কমপক্ষে ১ হাজার কোটি ডলার। এক বছরে ভারতে সঞ্চয়িত সম্পদ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ, যেখানে গড় সম্পদ বৃদ্ধির হার ছিল ২৫ শতাংশ। দেশটিতে ১ হাজার ৩৩৪ জন ধনকুবেরের সম্পদ বেড়েছে বা একই রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৭২টি নতুন মুখ। এছাড়া ২০৫ জনের সম্পদ কমেছে ও ৪৫ জন তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
প্রতিবেদনে হুরুন ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান গবেষক আনাস রহমান জুনায়েদ জানান, ভারতে গত বছর প্রতি পাঁচদিনে একজন নতুন বিলিয়নেয়ার তৈরি করেছে। এশিয়ার মধ্যে সম্পদ তৈরির ইঞ্জিন হয়ে উঠছে ভারত। গত বছর চীনে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমেছে, ভারতে বেড়েছে ২৯ শতাংশ। ভারতে বর্তমানে ৩৩৪ জন বিলিয়নেয়ার রয়েছেন, যা গত বছরের তুলনায় ৭৫ জন বেশি।
গত পাঁচ বছরে ছয় ব্যক্তি ও তার পরিবার ধারাবাহিকভাবে ভারতের শীর্ষ ১০ সম্পদশালীর তালিকায় অবস্থান করছেন। তারা হলেন গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানি, শিব নাদার, সাইরাস এস পুনাওয়ালা, গোপীচাঁদ হিন্দুজা ও রাধাকৃষান দামানি।
এবারের তালিকায় ভারতের সর্বকনিষ্ঠ বিলিয়নেয়ার হিসেবে নাম লিখিয়েছেন অনলাইন গ্রোসারি ডেলিভারি সংস্থা জেপ্টোর প্রতিষ্ঠাতা কৈবল্য বোহরা, তার সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ৯০০ কোটি রুপি। কোম্পানিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ২২ বছর বয়সী আদিত পালিচার সম্পদের পরিমাণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। এছাড়া প্রথমবারের মতো হুরুন ইন্ডিয়ার ধনীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন শাহরুখ খান। ৫৮ বছর বয়সী এ বলিউড অভিনেতার সম্পদের পরিমাণ ৭ হাজার ৩০০ কোটি রুপি। মূলত আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কলকাতা নাইট রাইডার্স ও প্রযোজনা সংস্থা রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট তাকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ