২০১৩ সালে হুয়াওয়ের সাশ্রয়ী সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে অনার ব্র্যান্ডের যাত্রা হয়। খুব স্বল্প সময়ের জন্য স্যামসাং ও অ্যাপলের মতো দৃঢ় প্রতিদ্বন্দ্বীকে পেছনে ফেলে দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষ অবস্থান। শুধু তা-ই নয়, গত বছরের শুরুর দিকে বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতার তকমাটিও দখলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হুয়াওয়ের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডটির পতন ঘটতে চলেছে।
ট্রেন্ডফোর্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে চলতি বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের ৮০ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ পাঁচে থাকবে স্যামসাং, অ্যাপল, শাওমি, অপো ও ভিভো। মার্কিন রফতানি নিষেধাজ্ঞায় পড়ে নিজেদের ডিভাইস উৎপাদনের সরঞ্জাম সংকটে পড়েছে হুয়াওয়ে। বাধ্য হয়ে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন উৎপাদনের সাব-বিভাগ ‘অনার’ বিক্রি করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এর ফলে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য হারাচ্ছে হুয়াওয়ে।
বিশ্বের শীর্ষ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে। যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে প্রতিষ্ঠানটির কনজিউমার ব্যবসা বিভাগ তীব্র চাপের মুখে রয়েছে। হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব ডিভাইস উৎপাদন কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিপ ও প্রযুক্তি সংকটে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ পরিস্থিতিতে অনেকটা নীরবে বিশ্বের কিছু বাজার থেকে ডিভাইস ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর নভেম্বরের শেষদিকে সাশ্রয়ী স্মার্টফোন ব্যবসা বিভাগ ‘অনার’ বিক্রি করে দেয় হুয়াওয়ে। বিভাগটি কিনেছে স্থানীয় হ্যান্ডসেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল চায়নার নেতৃত্বাধীন ৪০টি কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম। ওই সময় এক ঘোষণায় জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে খারাপ পরিস্থিতিতে থাকায় অনার ডিভাইস ব্যবসা বিভাগের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বিক্রি করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
অনার ব্র্যান্ড বিষয়ে গত বছর অক্টোবরেই টিএফটি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের বিশ্লেষক কুও মিং-চি বলেছিলেন, হুয়াওয়ের যে কোনো ধরনের সম্পদ ক্রয় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের অর্জন হতে পারে। সেটা অনার ডিভাইস ব্যবসা বিভাগ হোক কিংবা গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগের আংশিক ক্রয় হোক। কারণ হুয়াওয়ের অনার ব্র্যান্ড এরই মধ্যে বৈশ্বিক ডিভাইস বাজারে একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড। এর গবেষণা এবং উন্নয়ন বিভাগও অন্য যে কোনো স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের চেয়ে অনেক উন্নত।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন উৎপাদন চলতি বছর ৯ শতাংশ বেড়ে ১৩৬ কোটি ইউনিটে পৌঁছার আশা করা হচ্ছে। গত বছর স্মার্টফোন উৎপাদন হয়েছিল ১২৫ কোটি ইউনিট। কভিড-১৯ মহামারীর নতুন বাস্তবতায় মানিয়ে নিতে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা বেড়েছে। রিমোট ওয়ার্ক এবং অনলাইন শিক্ষার কারণে মোবাইল ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে চলতি বছরকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের সাবেক অবস্থায় ফেরার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
হুয়াওয়ে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি খাতে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি সরবরাহের দিক থেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও কয়েকটি মিত্র দেশ নিরাপত্তা দুর্বলতার অজুহাত দেখিয়ে হুয়াওয়ের ফাইভজি নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি বর্জনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যা সাম্প্রতিক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইভজি নেটওয়ার্ক চুক্তি হুয়াওয়ের হাতছাড়া হওয়ার পেছনে প্রভাব ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম ব্যবসার ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসডব্লিউ/ফাআ/২৩৪৫
আপনার মতামত জানানঃ