বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অংশগ্রহণ বাড়িয়েই চলেছে টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ে। দেশের ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক উন্নয়নের দেখভালকারী এ চীনা প্রতিষ্ঠানটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এ দফায় বাংলাদেশে আইসিটি ট্যালেন্টের বিকাশের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের ভিত্তিতে ‘বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০’ আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে হুয়াওয়ে। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধন করার সুযোগ পাবেন। মোবাইল নম্বর অথবা ই-মেইল অ্যাড্রেস যাচাইকরণের মাধ্যমে অনলাইনে সহজে ও বিনা মূল্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করা যাবে।
শুধু বিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিদ্যা বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য দুই মাসব্যাপী তিন রাউন্ডের এ প্রতিযোগিতার পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ডে হবে একক প্রতিযোগিতা। আর ফাইনাল রাউন্ডটি হবে দলীয় ভিত্তিতে। প্রতিযোগিতার সেরা তিন দল পুরস্কার হিসেবে ল্যাপটপ অথবা হুয়াওয়ে মোবাইল, হুয়াওয়ে স্মার্ট ওয়াচ অথবা ব্যান্ড পাবে।
বিজয়ী দল হুয়াওয়ে আইসিটি কম্পিটিশনের আঞ্চলিক ফাইনাল ও ওয়ার্ল্ড ফাইনালে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। এছাড়া কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উন্নতি হলে তারা চীনের শেনঝেনে অবস্থিত হুয়াওয়ের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনেরও সুযোগ পাবে। এমনকি বিজয়ী দলের সদস্যরা পরবর্তী সময়ে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডে চাকরির সুযোগও পেতে পারেন।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা বিজ্ঞান ও প্রকৌশলবিদ্যা-সংশ্লিষ্ট বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় উভয়কেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট থেকে হুয়াওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ করতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই।
আইসিটি ডিভিশনের অধীনে আইটি-আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রি প্রজেক্টের (এলআইসিটি) আইসিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ ও বিসিসি এ কর্মসূচিটি সমন্বয় করছে। এলআইসিটির প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মেধাবী তরুণদের জন্য বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০ চালু করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। বিভিন্ন ধরনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এ প্রতিযোগিতাটি ডিজাইন করা হয়েছে। এ প্রোগ্রামের মাধ্যমে যেসব মেধাবী তরুণ উঠে আসবেন, তারাই আগামীতে বাংলাদেশের আইসিটি খাতকে নেতৃত্ব দেবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা। এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাই।’
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের এন্টারপ্রাইজ গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়াং গুয়োবিং বলেন, বর্তমান যুগে যেকোনো খাত ও অর্থনীতির মূল ভিত্তিই হলো ডিজিটাল অবকাঠামো। এ নতুন ইন্টেলিজেন্ট বিশ্ব ও দেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করার প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে তরুণদের আইসিটি দক্ষতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে তারা এ খাতের বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রস্তুত হতে পারে। আমাদের এ কর্মসূচিটি তরুণদের আইসিটি খাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তর ত্বরান্বিত করতে আইসিটি ডিভিশনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা আনন্দিত। এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রতিযোগিতার মূলত দুটি অংশ রয়েছে। একটি হলো প্র্যাকটিক্যাল কম্পিটিশন। অন্যটি থিওরিটিক্যাল কম্পিটিশন। চলতি বছর এ প্রতিযোগিতায় নেটওয়ার্ক সুইচিং ও রাউটিং টেকনিক্যাল বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি, বিগ ডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ক্লাউডের মতো বিষয়গুলো সম্পর্কেও অংশগ্রহণকারীদের ধারণা দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার প্রথম পর্ব আগামী মাসে শুরু হবে। এ পর্বে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীদের হুয়াওয়ে নির্ধারিত ওয়েব পোর্টাল থেকে অনলাইন কোর্স করতে হবে। প্রথম রাউন্ড থেকে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ২০ জন প্রতিযোগী অনলাইন লার্নিং ও পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবেন। দ্বিতীয় পর্বে তাদের পরীক্ষার পাশাপাশি হুয়াওয়ে সার্টিফায়েড আইসিটি অ্যাসোসিয়েট (এইচসিআইএ) থেকে অনলাইন কোর্স করতে হবে।
দ্বিতীয় পর্ব থেকে সেরা ১০ দল জাতীয় পর্যায়ে ফাইনালের জন্য নির্বাচিত হবে। ফাইনালে প্রতি দলে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন শিক্ষার্থী ও একজন ফ্যাকাল্টি সদস্য থাকবেন। হুয়াওয়ের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রশিক্ষকরা অংশগ্রহণকারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন, যাদের সিমুলেশন টেস্টে পাস করতে হবে। এখান থেকে সেরা তিন দলকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর বিভাগগুলো pacd.bangladesh@huawei.com ঠিকানায় ই-মেইল করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। আর শিক্ষার্থীরা হুয়াওয়ে বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/HuaweiTechBD) রেজিস্ট্রেশন লিংক থেকে নিবন্ধন করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, চারটি ভিন্ন কর্মসূচি চালুর লক্ষ্যে গত মাসে বিসিসি ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষর করে হুয়াওয়ে। এগুলো হলো বাংলাদেশ আইসিটি কম্পিটিশন ২০২০, আইসিটি জয়েন্ট ইনোভেশন সেন্টার, হুয়াওয়ে আইসিটি একাডেমি ও কিউরেটিং বাংলাদেশী স্টার্ট আপ।
এসডাব্লিউ/বিবি/আরা/১২২০
আপনার মতামত জানানঃ