রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, সমাজের বিরুদ্ধে, প্রচলিত নিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলেই পড়তে হয় তোপের মুখে। হতে হয় নিষিদ্ধ। আর সমাজ পরিবর্তনের চিন্তায় অগ্রগামী বিখ্যাত চলচ্চিত্রকারদের সিনেমা নিষিদ্ধ করা যেন স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। এমন কিছু নিষিদ্ধ মাস্টারপিস নিয়ে এই আয়োজন।
দ্য গোল্ডেন এজ (১৯৩০)
লুইস বুনোএলের অন্যতম মাস্টারপিস দ্যা গোল্ডেন এজ। স্ক্রিপ্ট লিখেন বুনোএল ও সালভাদর দালি। ক্যাথোলিসিজম এর বিরুদ্ধে এক বোম্বসেল এই সিনেমা। মুক্তির পরপরই তাই নিষিদ্ধ হতে হয় ছবিটিকে। আর এই নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী হয় প্রায় ৫০ বছর।
টিন ড্রাম (১৯৭৯)
এই ছবিটি ৭০ দশকের সেরা ব্যবসাসফল জার্মান সিনেমার একটি। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৯ সালে। একই নামে লেখা বইয়ের জন্য গুন্টার গ্রাস জিতে নিয়েছিলেন নোবেল। বইয়ের কাহিনীকে সিনেমায় রূপ দিয়েছেন জার্মান পরিচালক ভলকার স্কে¬ানডরফ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকের পটভূমিতে এক বামুন যুবকের শৈশব আর বেড়ে ওঠার গল্প নিয়ে এর কাহিনী। দ্য টিন ড্রাম ১৯৭৯ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভলে জিতে নেয় সেরা ছবির পুরস্কার। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডেও জিতে নেয় সেরা বিদেশি ছবির পুরস্কার। ১৯৯৭ সালে এসে কানাডায় নিষিদ্ধ হয় ছবিটি। শিশু পর্নোগ্রাফির অভিযোগ তুলে ওকলাহোমাতে এটি নিষিদ্ধ হয়। শুধু তাই নয়, এর ডিভিডি না কেনার জন্যও সরকারিভাবে আইন জারি করা হয়।
দ্য আউট ’ল (১৯৪৩)
মুক্তির আগেই নিষিদ্ধ শব্দের সঙ্গে পরিচিতি ঘটে ছবিটির। এই ছবিতে মানব-মানবির ফিকশনাল সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে অভিনেত্রী জেন রাসেল অনেক বেশি আবেদনময়ী রুপে হাজির হয়েছেন । আর এই অপরাধেই তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ থাকে ছবিটি। অবশেষে ১৯৪৬ সালে এটি মুক্তি পায়। মুক্তির পরপরই দারুণ আলোচনায় চলে আসে ছবিটি। ছবিটি পরিচালনা করেছেন হাওয়ার্ড হাগস।
আই অ্যাম কিউরিয়াস – ইয়োলো (১৯৬৭)
এই ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে ২২ বছর বয়েসী এক মেয়ে লিনাকে কেন্দ্র করে। আর ছবির মাধ্যমেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পান সুইডিশ পরিচালক ভিলগো সজুমান। আই অ্যাম কিউরিয়াস মূলত বিনোদনধর্মী ছবি। এক উচ্ছল যুবতীর জীবন সম্পর্ককেই ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। ১৯৬৯ সালে নগ্নতার দায়ে নিষিদ্ধ করা হয়।
দ্য বার্থ অব এ নেশন (১৯১৫)
এই ছবিটিকেই মূলত বলা হয় হলিউডের প্রথম সিনেমা। এই নির্বাক ছবিটি পরিচালনা করেছেন ডি. ডব্লিউ গ্রিফিত। দ্য বার্থ অব এ নেশন মুক্তি পায় ১৯১৫ সালে। আফ্রিকান আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গের চরিত্রে এক শেতাঙ্গের অভিনয় এবং শেতাঙ্গ নারীর প্রতি তার যৌন আগ্রহের কারণে সিনেমাটি আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে বার বার নিষিদ্ধ হয়।
দ্য লাস্ট টেম্পটেশন অব ক্রাইস্ট (১৯৮৮)
১৯৫৫ সালে নিকোস কাজাসযাকিসের দ্য লাস্ট টেম্পটেশর অব ক্রাইস্ট বইটি প্রকাশিত হয়। বই প্রকাশের পরপরই ক্ষেপে ওঠে ক্যাথলিক চার্চ। বইটি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি লেখকেরও নির্বাসন দেশ থেকে। এরপর কেটে যায় তিন দশক। ১৯৮৮ সালে বইয়ের কাহিনীকেই চলচ্চিত্রে রূপ দেন পরিচালক মার্টিন স্করসিস। মুক্তির পরও ক্যাথলিক চার্চের তোপের মুখে পড়তে হয় ছবিটিকে। তুরস্ক, মেক্সিকো, চিলি, আর্জেন্টিনা, ফিলিপাইনসহ আরো অনেক দেশে নিষিদ্ধ হয় ছবিটি। আর এই নিষেধাজ্ঞা এখনো পর্যন্ত বলবৎ আছে।
লাইফ অব ব্রায়ান (১৯৭৯)
ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বললেই তোপের মুখে পড়তে হয় রাষ্ট্রের আর সেন্সর বোর্ডের। এই ছবির বেলাতেও ঘটেছে তাই। ১৯৭৯ সালে মুক্তি পায় মন্টি পাইথনের এই বিখ্যাত ছবিটি। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ থাকে ছবিটি।
নিষিদ্ধ আরো যত ছবি
আ ক্লকওয়াক অরেঞ্জ (১৯৭১) স্ট্যানলি কুবরিক, পিংকি ( ১৯৪৯), স্কারফেস (১৯৩২), টিটিকাস ফুলিস (১৯৬৭), দ্য প্রফিট ( ২০০১)।
আপনার মতামত জানানঃ