গাজার মুসলিমদের আর কতভাবে, যেভাবে খুশি সেভাবে হত্যা করলে, লাশের ওপর দিয়ে বুলডোজার উঠিয়ে দিলে বিশ্ববিবেক জাগ্রত হবে! আর কত মুসলিমের রক্তে লেখা হবে গাজার ইতিহাস! ৭ই অক্টোবরে হামাসের রকেট হামলার পর এতদিন ইসরাইলি নৃশংসতা ছিল জীবিত গাজাবাসীর ওপর। এবার তা অতিক্রম করেছে।
তারা কমপক্ষে চারটি মৃতদেহ ও অ্যাম্বুলেন্সের ওপর দিয়ে বুলডোজার উঠিয়ে দিয়ে তা থেঁতলে দিয়েছে। বীভৎস, ন্যক্কারজনক এই ঘটনা ঘটছে মুসলিমদের ঘরের ভিতরে, চোখের সামনে। চারপাশে মুসলিম দেশ- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর, ইরান, ইরাক, কাতার, তুরস্ক সহ আরও কত্ত দেশ।
তারা কিভাবে এই নৃশংসতাকে সহ্য করছে- তা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে বিশ্লেষকদের মধ্যে। পবিত্র রমজান চলছে। এ সময়টা মুসলিমদের কাছে জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় তারা ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকেন। কিন্তু এ সময়টাতেও রক্ষা নেই গাজাবাসীর।
তাদের ওপর অব্যাহতভাবে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলের হায়েনা বাহিনী। ২৪ ঘন্টায় তারা আল শিফা হাসপাতালকে ঘিরে সেখানে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই চত্বরে ছিল কমপক্ষে চারটি মৃতদেহ, অ্যাম্বুলেন্স। তার ওপর দিয়ে বুলডোজার উঠিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি দানবরা। শুধু তা-ই নয়, তারা গাজার দক্ষিণে আল আমাল এবং নাসের হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা গাজার উত্তরাঞ্চলে জাতিসংঘের আর কোনো খাদ্যবাহী গাড়িবহর প্রবেশে অনুমোদন দেবে না। অথচ গাজার উত্তরাঞ্চলে অবস্থানরত শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ চরম খাদ্যাভাবে ভুগছে।
এর মধ্যে গাজায় রক্তপাত বন্ধে মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা নিয়ে চলছে দৃশ্যত অন্য এক লড়াই। আল জাজিরাকে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তাদের সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইলি মধ্যস্থতাকারীরা। এ পর্যন্ত এই যুদ্ধে কমপক্ষে ৩২ হাজার ২২৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আহত করেছে কমপক্ষে ৭৪ হাজার ৫১৮ জনকে।
ইসরাইলের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পেতে যেসব ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন আল শিফা হাসপাতালে, তারা সেখানকার ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানেই মৃতদেহের ওপর দিয়ে বুলডোজার ও সমরাস্ত্রবাহী গাড়ি উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই হাসপাতালে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার ফিলিস্তিনির অন্যতম জামিল আল আয়ুবি।
তিনি দেখেছেন হাসপাতাল চত্বরে কিভাবে কমপক্ষে চারটি মৃতদেহের ওপর দিয়ে ইসরাইলিরা ট্যাংক ও সশস্ত্র বুলডোজার উঠিয়ে দিয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। হাসপাতালটি থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে ৫ তলা বিশিষ্ট ভবনে বসবাস করেন করিম আয়মান হাতাত। বার্তা সংস্থা এপিকে তিনি বলেন, বিস্ফোরণে তার ভবনটি কেঁপে ওঠে।
এ কারণে কয়েকদিন ধরে রান্নাঘরে আত্মগোপন করে আছেন। তিনি বলেন, সময় সময় ট্যাংক থেকে গোলা নিক্ষোপ করা হয়। এর মাধ্যমে আমাদেরকে সন্ত্রস্ত করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা দখল হয়ে যাওয়া এই হাসপাতালের ভিতরকার ভয়াবহ দৃশ্য শেয়ার করেছেন। তার মধ্যে আট জনের একটি দলকে হত্যা করা হয়েছে।
খান ইউনুসের কাছে ইউরোপিয়ান গাজা হাসপাতালের একজন এনেস্থেটিস্ট কোনস্টানটিনা ইলিয়া কারিদি ভিতরকার পরিবেশকে অকল্পনীয় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এই হাসপাতালে মাত্র ২০০ বেড আছে। তা বিস্তৃত করে এক হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। এর করিডোরে এবং ভিতরে তাঁবুতে অবস্থান নিয়েছেন প্রায় ২২ হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ।
কারণ, মানুষ মনে করছেন অন্য জায়গার চেয়ে এটা নিরাপদ হবে। ইমার্জেন্সি মেডিকেল টিমের একজন সদস্য হিসেবে কাজ করছেন কারিদি। তিনি মেডিকেল এইড ফর প্যালেস্টাইনস, ইন্টারন্যাশনাল রেসক্যু কমিটি এবং প্যালেস্টাইন চিলড্রেন্স রিলিফ ফান্ডের সঙ্গে কাজ করছেন। এক বিবৃতিতে এসব গ্রুপ বলেছে, তাদের স্টাফরা হাসপাতালের ভিতরে ভয়াবহ দৃশ্য দেখতে পাচ্ছেন। সেখানে ভয়াবহ পুষ্টিহীনতা এবং সংক্রমণে ভুগে মারা যাচ্ছেন রোগীরা।
আপনার মতামত জানানঃ