দেশে ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৬ হাজার ৫২৪ জন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৯৬ জনই মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলারের আরোহী কিংবা চালক, যা দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর ৫৭ শতাংশ। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে এ তথ্য জানিয়েছে। মূলত নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ও নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৪৮৭ জন মোটরসাইকেলচালক-আরোহী; ১ হাজার ২০৯ থ্রি-হুইলার যাত্রী; ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক্টর, ট্রলি ও লরি আরোহী ৩৮৪ জন; ২৭৪ বাস যাত্রী; প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স ও জিপযাত্রী ২২৯ জন; ২৯৬ জন স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী এবং ১৯৩ জন বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান আরোহীর মৃত্যু হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, এ সময়ে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে ৫৭২টি। দুই চাকার বাহনটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৯০৪টি। ভারী যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ২৫টি। অন্যান্য কারণে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯১৭টি দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেলচালক এককভাবে দায়ী ছিলেন। বাসচালক দায়ী ছিলেন ২৬১টি দুর্ঘটনায়। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি ও লরিচালক ১ হাজার ৩৬টি দুর্ঘটনায় দায়ী ছিলেন। প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসচালক দায়ী ছিলেন ৬৯টি দুর্ঘটনায়। এর বাইরে ১০৮টি দুর্ঘটনায় থ্রি-হুইলার; ১৩টি দুর্ঘটনায় বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা ও রিকশাভ্যানচালক এবং ৯৭টি দুর্ঘটনায় দায়ী ছিল পথচারীরা।
জাতীয় মহাসড়কে ৭৪৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে গত বছর। ১ হাজার ৫৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে আর ৪৩৪টি গ্রামীণ সড়কে। এর বাইরে শহরের সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩০১টি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এআই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশে মোট মোটরযানের ৭১ শতাংশ মোটরসাইকেল। এর চালকদের বিরাট অংশ কিশোর ও যুবক। এর মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা প্রবল। দেশে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকরা বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজেরাই দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং অন্যদের আক্রান্ত করছে। মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী নিহতের ঘটনাও দিন দিন বাড়ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার একটি ব্যাপক অংশ ঘটছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ও বাসের ধাক্কা, চাপা এবং মুখোমুখি সংঘর্ষে। এসব দ্রুতগতির যানবাহনচালকদের অধিকাংশই অসুস্থ ও অদক্ষ। এদের বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানোর কারণে যারা সতর্কভাবে মোটরসাইকেল চালান তারাও দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। চার চাকার যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেল ৩০ গুণ ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু দেশে গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নত ও সহজলভ্য না হওয়া এবং যানজটের কারণে মানুষ এ বাহনই ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা বাড়ছে।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ১২৮ শিশু, যা মোট নিহতের ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং নারী ৯৭৪ জন, যা মোট নিহতের ১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। ১ হাজার ৯৬৭টি দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৬৯৪ জন নিহত হয়েছে এ বিভাগে। সিলেটে সবচেয়ে কম ৩৪৭টি দুর্ঘটনায় ৩৮৮ জন নিহত হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, গত বছর ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত ও ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত ও ২৯৬ জন আহত হয়েছে।
আগের বছরের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ এবং প্রাণহানি কমেছে ১৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। ২০২২ সালে ২ হাজার ৯৭৩টি দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৯১ জন নিহত হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ