২০২২-২৩ অর্থবছর গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২৯ শতাংশের বেশি। বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে বেসরকারি খাতে উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান, জ্বালানির (গ্যাস, কয়লা ও তেল) মূল্য বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি এর অন্যতম কারণ।
তবে এ সময় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কয়েকটি কেন্দ্রে নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। একই চিত্র ছিল সরকারি আরও কয়েকটি কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে অস্বাভাবিক বেশি।
পিডিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছর সৈয়দপুর পাওয়ার স্টেশনে উৎপাদন হয়েছে নামমাত্র। এ সময় ২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলেছে এক শতাংশেরও কম। এতে মাত্র এক লাখ ৮৩ হাজার ২৯০ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। চরম অদক্ষ এ কেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেল লেগেছে ৭৩ টাকা ৮৩ পয়সার। কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে গড়ে ব্যয় হয়েছে ১৩ টাকা ৭২ পয়সা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় পড়েছে প্রতি ইউনিটের জন্য ৭৩৪ টাকা ৬৩ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়েছে ৮২২ টাকা ১৩ পয়সা।
এদিকে ১০৫ মেগাওয়াটের টঙ্গী পাওয়ার স্টেশন কেন্দ্রটি গত অর্থবছর চলেছে সক্ষমতার মাত্র ১ শতাংশ। এতে উৎপাদন হয় ৫৯ লাখ ৩২ হাজার ইউনিট। গ্যাসচালিত এ কেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় লেগেছে ৯ টাকা ৬১ পয়সার। কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে গড়ে ব্যয় হয়েছে দুই টাকা ৫৭ পয়সা। তবে বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় পড়েছে প্রতি ইউনিটের জন্য ১০০ টাকা ৬৪ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়েছে ১১২ টাকা ৮১ পয়সা।
ডিজেলচালিত রংপুর পাওয়ার স্টেশনের উৎপাদন সক্ষমতা ২০ মেগাওয়াট। ২০২২-২৩ অর্থবছর কেন্দ্রটি চলেছে সক্ষমতার মাত্র এক শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় লেগেছে ৩৪ টাকা ১৮ পয়সার। কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণে গড়ে ব্যয় হয়েছে তিন টাকা ৪০ পয়সা। আর বেতন-ভাতাসহ স্থায়ী ব্যয় পড়েছে প্রতি ইউনিটের জন্য ৪৬ টাকা ৭২ পয়সা। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়েছে ৮৪ টাকা ৩০ পয়সা।
এ তিনটির বাইরেও পিডিবি ও সরকারি দুটি ডিজেলচালিত কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে অন্যতম খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি ২২ লাখ ৩৩ হাজার ইউনিট, যা সক্ষমতার ২৭ শতাংশ। এতে গড় উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ৩৭ টাকা ৫২ পয়সা। তবে এর মধ্যে জ্বালানি ব্যয়ই ছিল ৩৩ টাকা ৪৩ পয়সা।
পিডিবির তথ্যমতে, গত অর্থবছর নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) সিরাজগঞ্জে অবস্থিত ২২৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রটি চলেছে সক্ষমতার ২১ শতাংশ। ডিজেলচালিত এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে গড়ে ৩৭ টাকা ৭১ পয়সা। আর এনডব্লিউপিজিসিএলের খুলনায় অবস্থিত ২৩০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটিতে গড়ে ব্যয় পড়েছে ৩৩ টাকা ৩১ পয়সা।
এ কেন্দ্রটি চলেছে সক্ষমতার ২২ শতাংশ। এ দুই কেন্দ্রের উচ্চ ব্যয়ের কারণ অত্যধিক জ্বালানি ব্যয়। কেন্দ্র দুটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে জ্বালানি ব্যয় পড়েছে যথাক্রমে ২৭ টাকা ১১ পয়সা ও ২৪ টাকা ৫৬ পয়সা।
এর বাইরে পিডিবির হাতিয়া ডিজেল জেনারেটর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ব্যয় পড়েছে ৩০ টাকা ৬৫ পয়সা। এ কেন্দ্রটিতে গড় জ্বালানি ব্যয় ছিল ১৯ টাকা ৮০ পয়সা। ২ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি গত অর্থবছর চলেছে মাত্র ২৩ শতাংশ সময়। মূলত হাতিয়া দ্বীপের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রটি চালানো হয়।
আপনার মতামত জানানঃ