ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। এ সময়ে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ২০ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যম দপ্তরের পক্ষ থেকে গতকাল বুধবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বলা হয়েছে, গাজায় নিহত মানুষের মধ্যে অন্তত ৮ হাজার শিশু রয়েছে। নিহত নারীর সংখ্যা অন্তত ৬ হাজার ২০০।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে নিহত হন ১ হাজার ১৩৯ জন। আহতের সংখ্যা ৮ হাজার ৭৩০। এ হিসাব ইসরায়েল সরকারের।
হামাসের হামলার জবাবে ৭ অক্টোবরই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
এরপর দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। মাঝে যুদ্ধবিরতির কয়েক দিন বাদে গাজায় নির্বিচার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি হামলা থেকে মসজিদ, বিদ্যালয়, হাসপাতাল, আশ্রয়শিবির—কিছুই বাদ যায়নি।
গাজায় অবিলম্বে হামলা বন্ধ ও যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোতে এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাতিল হয়ে গেছে। গাজা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে আরেকটি প্রস্তাবে ভোটাভুটি হতে পারে। এ প্রস্তাবে শেষ মুহূর্তে শব্দগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
ইসরায়েলি হামলার জেরে প্রতিদিনই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে গাজায়। হাসাপাতাল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে একটু একটু করে রোগ-ব্যাধির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে গাজা। এমতাবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাল, মহামারির ব্যাপক ঝুঁকির মুখে রয়েছে গাজা।
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে উপত্যকায় মহামারির ব্যাপক ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
এক সাক্ষাৎকারে হু’র মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘গাজায় মহামারির বিশাল ঝুঁকি রয়েছে এবং আমরা ইতিমধ্যেই এর প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি। তাই গাজায় চলমান লড়াই বন্ধ হতে হবে। সেখানে যুদ্ধবিরতি দরকার।’
মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘গাজার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। সেখানে এমন কিছু রয়েছে যা মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে। সেখানকার মানুষ জানে না যে তারা কোথা থেকে খাবার পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাজার মানুষ ঘুমাতে পারছেন না। এটি মানুষের ইমিউন সিস্টেমের ক্ষতি করে। মানুষ আতঙ্কিত। তারা জানেন না কী হতে চলেছে। গাজায় কোনও নিরাপদ স্থান নেই।’
মার্গারেট হ্যারিস আরও বলেন, প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি অ্যাম্বুলেন্সও পাঠাতে সক্ষম হয়নি। এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সেখানে আহত মানুষ চিকিৎসাও পাচ্ছেন না।
উল্লেখ্য, ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের জেরে ব্যাপক মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে গাজা। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ।
এদিকে, ফিলিস্তিন ভূখণ্ড পরিদর্শন করেছেন জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের মুখপাত্র। পরিদর্শন শেষে আজ মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। গাজা উপত্যকাকে শিশুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান বলে আখ্যা দিয়েছেন ইউনিসেফ মুখপাত্র।
দীর্ঘ দুই সপ্তাহ গাজা সফর শেষে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার বলেন, ‘আমি খুবই ক্ষুব্ধ। কারণ, ক্ষমতার অধিকারীরা লাখ লাখ শিশুকে মানবিক দুঃস্বপ্নের দিকে ঠেলে দিয়েছে।’
তিনি ইসরায়েলি হামলায় অঙ্গহানী শিশুদের বিষয়ে কথা বলেছেন। পাশাপাশি যেসব আহত শিশু হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের নিয়েও নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন।
আপনার মতামত জানানঃ