রাশিয়ার ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এসভিআর) এর পরিচালক সের্গেই নারিশকিন বলেছেন, ইউক্রেনের বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের পরিস্থিতি খুব ভালভাবে দেখায় যে, রাশিয়াকে কৌশলগত পরাজয়ের জন্য পশ্চিমের আশা স্পষ্টতই অবাস্তব।
তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, ইউক্রেন এ অঞ্চলে পশ্চিমাদের নাশকতামূলক প্রচেষ্টার মূল পয়েন্ট ছিল।
‘এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসনে সে দেশের জনসংখ্যাকে কামানের খোরাক হিসাবে ব্যবহার করছে। কিয়েভ শাসনের কাছে অফুরন্ত অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়ে আমেরিকান এবং ইউরোপীয়রা মস্কোর উপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে।
পশ্চিমারা প্রথাগতভাবে যাকে কৌশলগত পরাজয় হিসাবে বর্ণনা করে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি দেখায় যে এই জাতীয় স্বপ্ন আশাহীনভাবে নিরর্থক,’ তিনি সিআইএস সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা পরিষেবাগুলির প্রধানদের ১৯তম বৈঠকে বলেছিলেন।
‘আজ পশ্চিমারা তাদের লক্ষ্য ভিন্নভাবে তৈরি করেছে: রাশিয়াকে জয়ী হতে দেয়া উচিত নয়। তবে তাদের এই অনুমানও ত্যাগ করতে হবে,’ নারিশকিন বলেছিলেন।
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়াকে তুলনায় আনার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু সমরাস্ত্র অঙ্গনে রাশিয়ার উদ্ভাবন ক্ষমতা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের জন্য শুধূ উদ্বেগের কারন নয় বরং বড় ধরনের ভীতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। বিশেষ করে মিসাইল প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তাদের অবিশ্বাস্য উদ্ভাবন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সমগ্র বিশ্বের সমস্ত প্রতিরোধ আর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণরুপে অকার্যকর করে দিয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার মোট সৈন্য সংখ্যা ৩০ লাখ। সক্রিয় ১০ লাখ আর রিজার্ভ ২০ লাখ। বিমানবাহিনীতে মোট যুদ্ধ বিমান ও হেলিকপ্টারের সংখ্যা ৪ হাজার ১৬৩টি। ট্যাঙ্ক ১২ হাজার ৯৫০। সাজোয়া যান ২৭ হাজার ৩৮। রণতরী ৬০৩ টি । সাবমেরিন ৬২টি । ডেস্ট্রয়ার ১৬ আর ফ্রিগেট ১০টি। বিমানবাহী রণতরী আছে ১টি। ২০১৮ সালের সামরিক বাজেট ৬১ বিলিয়ন ডলার ।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্ট এর মতে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার হাতে ৬ হাজার ৫শ পারমানবিক বোমা রয়েছে। ১৯৯৭ সালে রাশিয়া ঘোষণা দেয় তার হাতে ৩৯ হাজার ৯৮৭ টন কেমিক্যাল অস্ত্র রয়েছে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার কাছে ৪৫ হাজার পারমানবিক বোমা ছিল। ১৯৫৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন ৫৫ হাজার পারমানবিক বোমা তৈরি করে বলে অনুমান করা হয়। ইউকিপিডিয়ার তথ্যে বলা হয়েছে ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ৬৮ হাজার পারমানবিক বোমার অধিকারী হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৩ সালে পারমানবিক কর্মসূচী শুরু করে।
এখন পর্যন্ত যত পারমানবিক অস্ত্র তৈরি হয়েছে তার মধ্যে সবচেযে শক্তিশালী রাশিয়ান আরডিএস ২০২ হাইড্রোজেন বোমা। এটি পশ্চিমা দেশে জার বম্বা নামে পরিচিত। ১৯৬১ সালের ৩০ অক্টোবর এর পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। বিশ্বে আজ অবধি যত বোমার বিষ্ফোরন ঘটানো হয়েছে তার মধ্যে এটা সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা। হিরোশিমা বোমার চেয়ে এট ৩ হাজার গুন বেশি ক্ষমতাম্পন্ন। এ বোমাই একটিই তৈরি করেছিল রাশিয়া।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক আর অবিশ্বাস্য ক্ষমতাসম্পন্ন মিসাইলের অধিকারী রাশিয়া। ভয়ঙ্কর এ মিসাইলের নাম অভ্যানগার্ড হাইপারসনিক গ্লাইড ভিহিক্যাল। গত ২৭ ডিসেম্বর এটি রাশিয়ার অরেনবার্গ অঞ্চলে দক্ষিন উরাল পর্বত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম এ মিসাইলের গতি শব্দের গতির চেয়ে ২৭ গুন বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বর্তমানে পৃথিবীতে কোনো দেশের কাছে এমন কোনো মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেই যে, রাশিয়ান এ মিসাইল আক্রমন ঠেকাতে পারে। রাশিয়া চাইলে এটি এখন পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে যে কোনো সময় নিক্ষেপ করতে পারে। অর্থাৎ কোনো ধরনের প্রতিরোধ ছাড়া গোটা পৃথিবী এখন রাশিয়ার পারমানবিক বোমার আওতার মধ্যে। যদি কারো সাথে যুদ্ধ বাধে তবে রাশিয়া এ মিসাইল নিক্ষেপ করে সে দেশ বা অঞ্চল মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। কারো তা ঠেকানোর সাধ্য নাই।
২০১৬ সালে যখন এটির পরীক্ষা চালানো হয় তখন ঘন্টায় ৭ হাজার মাইল অতিক্রম করে লক্ষ্য বস্তুতে সফলভাবে আঘাত করে এ মিসাইল। ২০১৫ সাল থেকে ক্রমাগত পরীক্ষা চালানোর পর ২০১৮ সালে এ মিসাইল উদ্ভাবনের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট পুতিন। রাশিয়ান এ হাইপারসনিক অ্যাভানগার্ড মিসাইল মোতায়েন এবং চীনেরও এ ধরনের মিসাইল উদ্ভাবন চেষ্টার বিপরীতে মার্কিন প্রতিরক্ষা কৌশল তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে মর্মে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন রাশিয়ার এ মিসাইল সমরাস্ত্র জগত, রাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জারের ভূমিকা পালন করবে।
কারন বর্তমানে এমন কোনো প্রযুক্তি নেই যে, পারমানবিক বোমা বহন করে হাইপারসনিক গতিতে ছুটে আসা মিসাইলকে ঠেকানো যায়। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন রয়েছে তার একটিও চীন ও রাশিয়ার পারামানবিক বোমা হামলা ঠেকাতে সক্ষম নয়। অ্যাভানগার্ড মিসাইলের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক দিক হলো রাশিয়া এর সাহায্যে প্রথমে হামলা করলে যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের যুদ্ধে তারা জয়ী হবে।
আপনার মতামত জানানঃ