তিন-চার মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই আশুলিয়ায় অবস্থিত এক পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে আর্থিক সংকটসহ কর্মহীনতার ভেড়াজালে আটকে অসহায় হয়ে পড়েছেন পোশাক শ্রমিকেরা। আজ সোমবার(১১জানু) সকালে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন জিরাবো এলাকায় অবস্থিত ওমরফু সোয়েটার লিমিটেড কারখানার প্রায় ৩০০ শ্রমিক। তারা আশুলিয়ার বগাবাড়ি থেকে আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে এসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে আইরিশ গ্রুপের ওমরফু সোয়েটার লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন তারা। গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে চলিত বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু ১ জানুয়ারি কারখানার ফটকের সামনে গেলে তালা দেখতে পান তারা। শ্রমিকরা আরো জানান, গত তিন মাসের বেতন বাকি তাদের। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানিয়ে শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, তাদেরকে হাজিরা বোনাস দেওয়া হয় না, মাতৃত্বকালীন ছুটির টাকা দেওয়া হয় না, বার্ষিক ছুটির টাকা দেওয়া হয় না, কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা হলে শ্রম আইন অনুযায়ী পাওনাদি পরিশোধ করা হয় না ও বাইরের মাস্তান দিয়ে ভয় দেখানো হয় শ্রমিকদের।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আশুলিয়া থানা কমিটির সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, কারখানাটিতে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা। শ্রমিকরা ঘরভাড়া দিতে পারছেন না, দোকানিদের বাকির টাকাও দিতে পারছে না।
অবিলম্বে কারখানা খুলে দিয়ে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের দাবি জানান ফরিদুল ইসলাম। অন্যথায় আরো বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা সংকটকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই গার্মেন্টস মালিকেরা পোশাক শ্রমিকদের সাথে টালবাহানা শুরু করেছে। করোনা সংকটের বাইরেও বিভিন্ন গার্মেন্টস কম্পানির বিরুদ্ধে শ্রমিকদের বেতন আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে। করোনার সংকট দেখিয়ে সেই অত্যাচার এখন চূড়ান্ত রুপ লাভ করেছে। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ নেই বলে গার্মেন্টস মালিকেরা পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন অত্যাচার করে থাকে। কদিন আগেই বিজিএমইএ শ্রমিকদের বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ৫% হারে বাড়ানোর বিরোধ করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল। তাদের অজুহাত ছিল, করোনা সংকটে পোশাক শিল্পের রপ্তানি ব্যহত হয়েছে যার ফলে কম্পানিদের লস গুনতে হয়েছে। এমতাবস্থায় কম্পানিগুলো বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট বন্ধের দাবি জানান। এই করোনা সংকটেও পোশাক শ্রমিকদের বেতন বোনাস আটকের অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন গার্মেন্ট কম্পানির বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের সমন্বয়হীনতার অভাবে শ্রমিকেরা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করেও পাচ্ছে না তাদের ন্যায্য পাওনা। ফলে বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে পরিশোধ করতে পারছেন না দোকানের বাকি বকেয়া। এদিকটায় সরকার বরাবরই উদাসিন থাকেন বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ তোলেন। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ সহ বকেয়া মাসের বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তারা। একইসাথে শ্রম আইন অমান্যের অপরাধে উক্ত কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এসডাব্লিউ/কেকে/কেএইচ/১৭০৮
আপনার মতামত জানানঃ