রাজধানীর নির্বাচন ভবন থেকে সিইসির তফসিল ঘোষণা ভাষণ সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে দাবি করে সকল রাজনৈতিক দলকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি, জামায়াতসহ তাদের সমমনা বিরোধী দলগুলোর কঠোর বিরোধিতার মধ্যেই এ ঘোষণা দেওয়া হলো।
আজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
রাজধানীর নির্বাচন ভবন থেকে সিইসির তফসিল ঘোষণা ভাষণ সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়েছে। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ রয়েছে দাবি করে সকল রাজনৈতিক দলকে ভোটে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জাতীয় নির্বাচনের আগে আর সামান্যই সময় হাতে থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেকার সংকট সমাধানের ম্যান্ডেন্ট তার নেই বলে চলতি নভেম্বরেই স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন সিইসি।
সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।
একাদশ সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, সেই সংসদের মেয়াদ আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে।
বর্তমান সরকার সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন অনুষ্ঠানে অনড় অবস্থানের কথাও জানিয়েছে। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী উভয়েই জানিয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিবে না তারা।
তফসিল ঘোষণার আগেই ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিলের ঘোষণা দেয়। দলটি জানায়, তারা ‘সরকারের একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাকে’ সমর্থন করবে না।
এসব বিরোধিতার ঘটনা মাথায় রেখে, নাশকতা এড়ানোর কথা বলে দেশের প্রধান প্রধান শহর ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি সদস্যের মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের ব্যয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি হবে। চলতি অর্থবছরে কমিশনের জন্য পরিচালন ব্যয় গত অর্থবছরের চেয়ে ৩ গুণের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এতেও নির্বাচন পরিচালন ব্যয় মেটানো নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
কমিশন বলছে, এই বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে নির্বাচন খাতে অর্থ বাড়াতে হবে।
গত ১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আন্ত মন্ত্রণালয়ের একটি সভায় নির্বাচন ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরেছে কমিশন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে নির্বাচন খাতে অর্থ বাড়াতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এই সভায় পররাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও সম্প্রচার, শিক্ষা, নৌপরিবহন, বিদ্যুৎ, মন্ত্রিপরিষদ, স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য, সড়ক পরিবহন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য দুই হাজার ৪০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় দুই হাজার ১২৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২৮২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কমিশনের জন্য এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ কমিয়ে এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা করা হয়। গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে পরিচালন ব্যয় ৬৭৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ৭৪৯ কোটি টাকা ধরা হয়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে নির্বাচনী ব্যয় বরাদ্দের চেয়ে বেশি হবে।
যদিও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রাক্কলিত সম্ভাব্য ব্যয় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার বেশি হবে। কমিশন নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব করে এই তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে তুলে ধরেছে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ এবং উপজেলা, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও উপনির্বাচনের ব্যয় রয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচন বিবেচনা করেই গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর পরও আরো বরাদ্দের প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন থেকে বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব এলে বিবেচনা করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট হতে পারে। নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সম্প্রতি প্রাক্কলিত এই অর্থ ব্যয় হবে। এর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মোট ব্যয় হয়েছিল তিন হাজার ২৭৯ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৪১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে নির্বাচনী অর্থবছরে কমিশনের ব্যয় বেড়েছিল দুই হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় এক হাজার ৬৮৫ কোটি ও উন্নয়ন ব্যয় ২১০ কোটি টাকা ছিল। সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে চার হাজার ৩৪২ কোটি টাকা করা হয়। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় দুই হাজার ৩২২ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় দুই হাজার ২০ কোটি টাকা রাখা হয়। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বছরে কমিশনের বাস্তবে পরিচালন ব্যয় এক হাজার ৬৯৪ কোটি এবং উন্নয়ন ব্যয় হয়েছিল এক হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।
সভায় নির্বাচন উপলক্ষে ব্যয় নির্বাহে আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের বিষয় তুলে ধরেছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে, বিভিন্ন দ্রব্যের উচ্চমূল্যের নিরিখে কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত কয়েকটি খাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচন পরিচালনামূলক কাজে ব্যয়ের জন্য অর্থের হার ও পরিমাণ বৃদ্ধি করারও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
কমিশন জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সাধারণ-উপনির্বাচনের
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় বরাদ্দের হার ও পরিমাণ নির্ধারণ করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা হয়েছে। সভার তথ্য ও মতামতের ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কাজে ব্যয় বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে।
আপনার মতামত জানানঃ