গত বুধবার (৬ জানুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের হামলার জেরে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার, ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হয়। এর একদিন পর টুইটার অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু হলেও পরে অ্যাকাউন্টটি পুরোপুরি বাতিল করা হয়। শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) টুইটার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আরও বেশি সহিংসতার উস্কানি দেয়ার ‘আশঙ্কা’ থেকে এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন তারা।
টুইটার কর্তৃপক্ষ এক টুইটে বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা সাম্প্রতিক পোস্টগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পর স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তার অ্যাকাউন্টটি। ফের দাঙ্গায় উস্কানি দেয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই টুইটে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আজ শনিবার(০৯জানু) তার ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে এক স্ট্যাটাস দেন। যেখানে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বাকস্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একইসাথে অন্যদেশের বাকস্বাধীনতা বিষয়ে নাক গলানো বিষয়েও হুঁশিয়ার করে দেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে জয় বলেন, মিথ্যা ছড়ানোর কারণে সহিংসতার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করেছে টুইটার ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এটাই যুক্তরাষ্ট্রে বাকস্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা।
বাংলাদেশের নতুন আইন অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করলে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা ব্লক বা অপসারণের জন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে। এর পরই অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এবিষয়টা সামনে রেখে জয় জানান, ‘যারা আমাদের ডিজিটাল সুরক্ষা আইন সম্পর্কে অভিযোগ করে আসছে, বিষয়টি তাদেরও খেয়াল করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার প্রাইভেট কোম্পানিকে আদেশ জারির ক্ষমতা দেয়। বাংলাদেশে আমরা মনে করি এই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত আদালতের, প্রাইভেট কোম্পানির নয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেকেরই স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার আছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা তখনই শেষ হয়ে যায়, যখন মিথ্যা প্রচার করে অন্যদের কষ্ট দেয়। কাউকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার কারো নেই।’
দূতাবাসগুলোকে সতর্ক করে জয় বলেন, ‘আমি চাই ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এবং অন্য পশ্চিমা দূতাবাসগুলো এই পোস্টের বিষয়টি নোট রাখুক। বাংলাদেশের বাক্স্বাধীনতার বিষয়ে ভবিষ্যতে আপনাদের থেকে ভণ্ডামিপূর্ণ বিবৃতি আর দেখতে চাই না।’
এদিকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। একইসাথে বাংলাদেশ এবং আমেরিকার চিত্রেও যে রয়েছে বিস্তর ফারাক, সেবিষয়ে তারা অভিমত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা অন্তিম মুহূর্তে রয়েছে। এসময় সজীব ওয়াজেদ জয়ের আমেরিকার সাথে দেশের বাকস্বাধীনতা নিয়ে তুলনায় আসাটাকে রাজনৈতিক গলাবাজি হিসেবেই দেখছেন তারা। তারা মনে করেন, দেশের যেখানে পান থেকে একটু চুন খসে পড়লেই হাতকড়া পরিয়ে দেয়, মামলার বেড়াজালে বন্ধী করে ভোগান্ততিতে ফেলে একইসাথে আদালত কর্তৃক শাস্তিও প্রদান করে থাকে, সেদেশে বাকস্বাধীনতা কতটা বজায় আছে সেবিষয়ে মোটা অক্ষরে প্রশ্ন করা যায়। আমজনতার মামুলি ফেসবুক পোস্ট সরকার যেখানে হজম করতে পারে না, সরকারী বাহিনী এসে তুলে নিয়ে যায়, সেখানে অন্যদেশের সাথে বাকস্বাধীনতার তুলনা যায় না বলে মনে করেন তারা। দেশে প্রায় প্রতিদিনই ‘প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি’র দায়ে কাউকে না কাউকে সরকারের বাহিনী তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এমনও না যে তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তরুণ তরুণীরা ফেসবুকের কল্যাণে সরকার এবং সরকার প্রধানকে নিয়ে পরোক্ষ ট্রোল করলেই যেদেশে গ্রেপ্তারের শিকার হয়, সেদেশে বাকস্বাধীনতার গর্ব করা যায় না বলে মনে করেন তারা। নিজ দেশের বাকস্বাধীনতা সমুন্নত রেখে তারপর অন্যদেশের সাথে বাকস্বাধীনতা নিয়ে তর্ক তোলা উচিত বলে মনে করেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০২৮
আপনার মতামত জানানঃ