গাজায় মৃত্যুর মিছিল। মুহূর্তের মধ্যে সেখানে বেড়ে যাচ্ছে নিহতের সংখ্যা। হাসপাতালে লাশ। ধ্বংসস্তূপের নিচে লাশ। মৃত দেহ এবং আহতদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না হাসপাতালে। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আহত এসব মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ অবস্থায় হাসপাতালগুলোর জন্য জরুরি মেডিকেল সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে নিরাপদ করিডোর উন্মুক্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামাসের রকেট হামলার জবাব দিতে ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। সোমবার দিবাগত রাতে গাজার খান ইউনুসে চারটি এম্বুলেন্সকে টার্গেট করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
বেইত হানুনেও বোমা হামলা করা হয়েছে। এর ফলে শহরটিতে একটিমাত্র হাসপাতাল সেবা দেয়ার সক্ষমতা হারিয়েছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রতিশোধের হামলা সবেমাত্র শুরু। অর্থাৎ এর চেয়েও ভয়াবহ হামলা অপেক্ষা করছে। নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট গাজায় পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্য সহ সব রকম মৌলিক সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এর ফলে ওই শহরে বসবাসকারী প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনির অবস্থা অকল্পনীয় পর্যায়ের। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলাদা এক বিবৃতিতে বলেছে, স্বাস্থ্য সেবাখাত সচল রাখার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ নেই বললেই চলে। এতে অসুস্থ ব্যক্তিদের জীবন পড়েছে ঝুঁকিতে।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সম্পূর্ণ অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে একথা বলেছেন তিনি।
ভলকার তুর্ক বিবৃতিতে বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে বঞ্চিত করে তাদের জীবন বিপন্ন করে এমন অবরোধ আরোপ করা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে নিষিদ্ধ।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় রাতভর ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। একই সাথে গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে তারা। এর অংশ হিসেবে উপত্যকাটিতে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হচ্ছে। এতে বিধ্বস্ত গাজায় ভয়ানক মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলন হামাসের হামলার জবাবে শনিবার থেকে গাজায় বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। এরই মধ্যে সোমবার উপত্যকাটি সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গাজায় স্থল অভিযানের জন্য সেনা সমাবেশও ঘটানো হয়েছে। তিন লাখ রিজার্ভ সেনাকে বাহিনীতে যুক্ত করেছে ইসরায়েল।
গতকাল সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওয়াভ গ্যালান্ট বলেছেন, আমি গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দিয়েছি। বিদ্যুৎ, খাবার ও গ্যাসসহ সবকিছুই সেখানে বন্ধ থাকবে।’ যদিও শনিবার থেকেই গাজায় বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবরোধ আরোপের পর কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্য সরবরাহের অনুমতি না দিলে গাজা উপত্যকা নতুন মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।
বাসিন্দারা বলছেন, শনিবার থেকে গাজা উপত্যকায় কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি এবং সোমবার ইসরায়েল এই অঞ্চলে ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ ঘোষণা করেছে- তারা বলেছে বিদ্যুৎ, খাদ্য, জ্বালানি এবং পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।
গাজায় প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বসবাস করে, যাদের ৮০ শতাংশ সাহায্যের ওপর নির্ভর করে।
এদিকে হামাসের হামলায় নিহত ইসরায়েলিদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯০০ তে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও প্রায় ২৫০০ ইসরায়েলি। এর আগে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গোটা উপত্যকাজুড়ে চলছে বোমা হামলা। এখন পর্যন্ত ৭০০ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ৩ হাজারের বেশি।
আপনার মতামত জানানঃ