নির্ধারিত বিচারিক কর্মঘণ্টার মধ্যে বিচারকরা নিজেদের অলস সময় এবং ব্যক্তিগত কাজ করেন বলে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন সুপ্রিম কোর্ট। একইসাথে নির্ধারিত বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে সারাদেশের নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি জারি করেন। আজ বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্টার জেনারেল মো. আলী আকবর এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করেন।
বিচারিক কর্মঘণ্টার সময় অধীন বিচারকদের সঙ্গে আলোচনা পরিহার করে এর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে জেলা ও মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিসিয়াল এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রতি কঠোর নির্দেশনা দিয়ে এ সার্কুলার জারি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তবে প্রশাসনিক বা বিচারিক কোনো বিষয়ে অধীন বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন হলে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরে আলোচনা করা যাবে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের গোচরীভূত হয়েছে যে, কোনও কোনও জেলায় জেলা জজ/মহানগর দায়রা জজ/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা এজলাসের সময়ে তাদের খাস কামরায় অধীনস্থ বিচারকরাসহ আলোচনারত থাকায় এজলাসে বিলম্বে ওঠেন। এছাড়া কোনো কোনো বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এজলাস ত্যাগ করেন। ফলে আদালতের বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ সদ্ব্যবহার হচ্ছে না।’
‘তাই বিজ্ঞপ্তিতে দেশের অধস্তন আদালতের জেলা জজ/মহানগর দায়রা জজ/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে নির্ধারিত বিচারিক কর্মঘণ্টায় অধীনস্থ বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আলোচনা পরিহার করে বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ সদ্বব্যবহার করার কঠোর নির্দেশ প্রদান করা হয়।’
প্রশাসনিক/বিচারিক কোনও বিষয়ে অধীনস্থ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন হলে নির্ধারিত কর্মঘণ্টার পরে আলোচনা করা যাবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ তুলে বলেন, আদালতগুলোতেও সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মতো বিচারকরা বিলম্ব করে আসেন এবং দ্রুতই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। এতে দিনের নির্ধারিত বিচারিক কাজকর্ম আটকে যায় এবং পরবর্তীতে মামলার জটে আদালতের নাভিশ্বাস অবস্থা তৈরী হয়। এমনও বিচারক আছেন যারা নিয়মের তোয়াক্কা না করে আদালতে আসেন না এবং ফলশ্রুতিতে উক্তদিনের মামলাটি ঝুলে থাকে। এতে মামলায় সংশ্লিষ্টদের ভোগান্তি বাড়ে বলে মনে করেন তারা। এসব ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিচারকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থের জন্য মামলা ঝুলিয়ে রাখা ইত্যাদিসহ বহু অভিযোগ আসে। বিচারদের বিচার করা জরুরি যেখানে সেখানে অন্যদের বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, আদালতে মামলার পাহাড় জমে থাকার পেছনে একদিকে যেমন বিচারক সংখ্যার ঘাটতি দায়ি, অন্যদিকে নিয়োগকৃত বিচারকদের কর্মঘণ্টায় নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার বিষয়টিও সমান দায়ি। এই বিষয়ে কেবল হুঁশিয়ারি কিংবা কঠোর নির্দেশ নয়, কার্যত ব্যবস্থা নেওয়ারও জোর দাবি জানান তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/ ২০২৫
আপনার মতামত জানানঃ