জেনারেল অথরিটি অফ স্ট্যাটিস্টিকস কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে সৌদি আরবে তালাকপ্রাপ্ত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। ৩০-৩৪ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের হার সবথেকে বেশি।
সংখ্যাটা প্রায় ৫৪ হাজার। ৩৫-৩৯ বছরের নারীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা ৫৩ হাজার। উপরন্তু, দেশে ২০২২ সালে বিধবার সংখ্যা ২ লক্ষ ৩ হাজার ৪৬৯।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খেলাধুলা, প্রযুক্তিসহ একাধিক ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা পর্যালোচনা এবং ২০২২ সালের আদমশুমারির ফলাফল পরীক্ষা করার পরে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ১৫-১৯ বছর বয়সী মেয়েদের সংখ্যা ৯ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৩৯। ২০-২৪ বছর বয়সী মেয়েদের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৫০ হাজার ৭৮০।
সৌদি নারীরা কর্মসংস্থান খাতে স্থিতিস্থাপকতা এবং বৃদ্ধি দেখিয়েছে। বেকারত্বের হার কমেছে, ২০২২ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এটি ১৫.৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা পূর্ববর্তী বছরগুলির থেকে স্পষ্ট অগ্রগতি প্রদর্শন করে।
অধিকন্তু, নারীদের অর্থনৈতিক অবদানের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় উত্থান ঘটেছে, যা ২০২১ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের ২৭.৬শতাংশ থেকে ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে ৩০.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি শ্রমবাজারে নারীদের অংশগ্রহণের সামগ্রিক হারকে ৩৬ শতাংশে উন্নীত করে।
নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার চেতনা বিকশিত হয়েছে। ২০২১ সালে কর্মস্থানে নারীদের অংশগ্রহণ ৯ লক্ষ ৬১ হাজার ১৮৯ তে পৌঁছেছে। যা ২০১৯ সালের থেকে ৭৯৯৭ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেয়ারবাজারও সৌদি নারীদের প্রভাব থেকে বাদ পড়েনি। ২০২১ সালে ১৫ লক্ষ ১৬ হাজার ৯৯৫ নারী বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে অংশ নিয়েছেন। ২০১৯ এবং ২০২০ থেকে সংখ্যাটা বেড়েছে। শারীরিক স্বাস্থ্যও মহিলাদের মধ্যে একটি অগ্রাধিকার হিসাবে দাঁড়িয়েছে।
নারীদের মধ্যে শারীরিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি ঝোঁকও বেড়েছে। ২০২১ সালে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীরা উল্লেখযোগ্যভাবে সাপ্তাহিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপে অন্তত ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করছেন।
ওমান কিংডমের জাতীয় পরিসংখ্যান কেন্দ্র জানিয়েছে, তাদের দেশে ২০১৯ সালে ১৮ হাজার ২৪৩টি বিয়ে নিবন্ধন করা হয়েছে। আর বিচ্ছেদের রেকর্ড আছে ৩৭২৮টি। এর অর্থ হলো, ওমানে গত পাঁচ বছরের মধ্যে বিয়ের সংখ্যা এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে দশটিরও বেশি পরিবার ভেঙে যাচ্ছে।
কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে আরব আমিরাত। এ দেশে বিচ্ছেদের ঘটনা স্বাভাবিক রয়েছে। আরব আমিরাতের সরকারি সূত্র বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ছয় মাসে তাদের দেশে বিবাহবিচ্ছেদের হার ৫১.৮ ভাগ কমেছে।
কুয়েতের আইন মন্ত্রী একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, ২০২০ সালে তাদের দেশে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৮.৯ হাজার। অথচ, ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫ হাজার।
কাতারের পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান সংস্থা জানিয়েছে, তাদের দেশে বিয়ে এবং বিচ্ছেদ দুটিরই সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। দেশটির সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, কাতারি নাগরিক ও প্রবাসীদের মধ্যে বিবাহের সংখ্যা ৩৮ ভাগ কমেছে। আর স্থানীয় নাগরিক ও প্রবাসীদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বছরে ৭৫ ভাগ কমেছে। দুবাই পরিসংখ্যান কেন্দ্রের মতে, গত চার বছরে দুবাইতে বিবাহ বিচ্ছেদের হার ৩৫ ভাগ কমেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সৌদি আরবে বিবাহ বিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। দেশটির পরিবারবিষয়ক পরামর্শক মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল-কুরানি জানান, বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিয়ের অবমূল্যায়ন, সত্যিকার সম্পর্ক ও দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এবং রাতে দেরি করে স্বামীর ঘরে ফেরা।
আল-কুরানি বলেন, যেসব নারী বাইরে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করে, ধীরে ধীরে তারা ঘরে সময় দেয়া কমিয়ে দেয়। বাইরে থেকে যখন ঘরে ফেরে, তখন পরিবার, স্বামী ও সন্তানের পেছনে সময় ব্যয় না করে মোবাইলে সময় নষ্ট করে। যার কারণে তাদের দাম্পত্য জীবন নষ্ট হয়ে যায়। একপর্যায়ে বিবাহ বিচ্ছেদের পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
এসডব্লিউএসএস/১০২০
আপনার মতামত জানানঃ