চলতি বছর থেকে পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই হজ করতে পারবেন সৌদি নারীরা। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) স্থানীয় মুসলমানদের জন্য ২০২৩ সালের হজের নিবন্ধন শুরুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। এতে পুরুষ অভিভাবক ছাড়াই সৌদি নারীদের জন্য নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।
দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলেছে, নারী হজযাত্রীদের জন্য আর মাহরাম প্রয়োজন হবে না এবং অনলাইন আবেদনের জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে হজযাত্রীদের মধ্যে যারা আগে হজ করেননি তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বা খালি জায়গার প্রাপ্যতার ভিত্তিতে অন্যদের সুযোগ দেয়া হবে।
সৌদি প্রেস এজেন্সির এক বিবৃতি অনুসারে, অর্থনৈতিক প্যাকেজটি ৩ হাজার ৯৮৪ রিয়াল থেকে শুরু হচ্ছে এবং হজযাত্রীরা একসঙ্গে পুরো অর্থপ্রদান করতে পারবেন বা তিনটি কিস্তিতে তা পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন।
পবিত্র স্থানগুলোতে পৌঁছানোর কমপক্ষে ১০ দিন আগে হজযাত্রীদের একটি বৈধ ‘এসিওয়াইডব্লিউ মেনিনজাইটিস’ ভ্যাকসিন সনদ ছাড়াও কোভিড-১৯ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিনগুলোর ডোজ সম্পূর্ণ করতে হবে।
এছাড়া শুধুমাত্র হজ সংক্রান্ত যে কোনও পরিষেবার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ইস্যু করা লাইসেন্সপ্রাপ্ত সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেবা নিতে হজযাত্রীদের আহ্বান জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে হজের নিবন্ধন অবশ্যই হজযাত্রীদের নিজেদেরই করতে হবে।
এর আগে ২০১৯ সালে সৌদি নারীদের ওপর থেকে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল, পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া ২১ বছর বয়সী সৌদি নারীরা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এরপর ২০২১ সালের শুরুর দিকে এক ঘোষণায় ১৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সী সৌদি নারীদের আইডি কার্ডে নাম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, নাম বদলাতে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন হবে না।
একই বছরের হজের নিবন্ধনে স্থানীয়দের জন্য নির্দেশিকা জারি করে সৌদির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, হজের নিবন্ধনের জন্য নারীদের পুরুষ অভিভাবকের আর কোনও প্রয়োজন নেই। তারা অন্য নারীদের সঙ্গে এখন থেকে একা একা পবিত্র হজ আদায় করতে পারবেন।
সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷ গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সৌদি নারীরা পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
২০১৭ সালের পর সৌদির পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। যুবরাজ সালমান দেশটির সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায় আগের চেয়ে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছেন নারীরা। ২০১৭ সালের আগে সৌদিতে নারীদের সাইকেল চালানোর কথা যেখানে ভাবাই যেতো না।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের।
২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। উবার চালানো, সাইকেল চালানো, ট্রেন চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউএসএস/১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ