শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের গবেষকরা সিলেট বিভাগে নতুন ৬ ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন যা বিশ্বে একেবারেই নতুন। এ ধরনের করোনা বিশ্বের কোথাও ইতিপূর্বে শনাক্ত হয়নি। এই ৬ ধরন ছাড়াও শাবিপ্রবি আরো ২৪ ধরনের করোনা ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছেন যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে শনাক্ত হলেও বাংলাদেশে নতুন। মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন শাবিপ্রবির গবেষকরা।
গবেষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জি এম নূরনবী আজাদ জুয়েল বলেন, আমরা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের জিনোম সিকোয়েন্স করি। সেখান থেকে আমরা করোনার জিনোমে নতুন একটা মিউটেশন (Genome: 27862 : Del : ATCAT) পাই যা পূর্বে বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি।
এছাড়া সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে করোনার ১০টি নমুনার জিন বিশ্লেষণ করে প্রোটিন লেবেলে ৪৭টি পরিবর্তন পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩০টি পরিবর্তিত করোনাভাইরাস বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে একেবারে নতুন।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে করোনার গতিপ্রকৃতি ও বৈচিত্র্য উদঘাটনের লক্ষে শাবির জিইবি বিভাগ কাজ করছে। ফলে আমাদের দেশে কোনো ভ্যাক্সিন কার্যকর হবে সেটার একটি ডিজাইন আগে থেকেই আমরা এ গবেষণাগুলোর মাধ্যমে বুঝতে পারব।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করোনা ল্যাব চালু করি। আমরা করোনা ভাইরাসের প্রকৃতি ও বিস্তার নিয়ে গবেষণাও করছি, যা শাবিপ্রবির এক অনন্য অর্জন।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষকদের এ গবেষণায় আমরা গর্বিত। করোনাভাইরাসে সংক্রমণের শুরু থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ অঞ্চলের মানুষের পাশে ছিল এবং আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে। করোনা শনাক্তকরণ কার্যক্রমে যেন ব্যাঘাত না হয় সেজন্য আরো একটি মেশিন ক্রয় করা হয়েছে এবং জিনোম সিকুয়েন্সের জন্য নতুন মেশিন ক্রয়ের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু শিক্ষা দান নয়; বরং গবেষণার মাধ্যমে মানবতার কল্যাণে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। এসব বিষয়ে লক্ষ্য রেখেই গবেষণা খাতে এবার ৭ গুণের বেশি বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
মূলত বাংলাদেশে করোনার গতিপ্রকৃতি ও বৈচিত্র্য উদঘাটনের লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবি বিভাগ এ মিউট্যান্টগুলো নিয়ে কাজ করছে। এদিকে উন্মোচিত নমুনাগুলো বাংলাদেশের সংক্রমিত করোনাভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও করোনার টিকা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করেন গবেষকরা।
গবেষণায় ভাইরাসের জিনোম কাঠামোতে মোট ৭৯টি মিউটেশেন পাওয়া যায়। প্রোটিন লেভেলে পাওয়া যায় মোট ৪৭টি মিউটেশন যাতে ১টির সাথে (M12331 Spike Protein) একমাত্র যুক্তরাজ্য (ইউকে)-এর মিউটেন্টের মিল রয়েছে। তবে তা বর্তমানে ইউকের আলোচিত মিউটেন্ট (p2681H) এর সাথে কোনো মিল নেই।
তবে এর মধ্য ৬টি পরিবর্তিত করোনাভাইরাস এর পূর্বে বিশ্বের কোথাও পাওয়া যায়নি এবং ২৪ ধরনের করোনাভাইরাস বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একেবারে নতুন। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ ধরনের ভাইরাস রয়েছে বলে জানান গবেষকরা।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, করোনা ভাইরাস প্রতিনিয়ত নিজের রুপ পরিবর্তন করে ভিন্নরুপ নিচ্ছে এবং পূর্বেকার থেকে একেবারেই নতুন এবং শক্তিশালী হচ্ছে। একেরপর এক নতুন করোনা শনাক্ত হলেও দেশ এখনো করোনা মোকাবেলায় তেমন একটা সামর্থ অর্জন করতে পারেনি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট অনেক যাত্রী আসে। এসব যাত্রী করোনার নতুন এই ধরন বহন করে নিয়ে আসতে পারে বলে ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা এবং তা যে দেশব্যাপী দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে এবিষয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। করোনার নতুন বিস্তার নিয়ে সরকারের তেমন কোনো মাথা ব্যথা নেই, ব্যবস্থাপনায়ও শিথিলতা নেমে এসেছে, অনেকটা হাল ছেড়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। যথাযথ ব্যবস্থার অভাবে নতুন এই করোনা, যা বিশ্বের কোথাও দেখা যায়নি, বাংলাদেশে এর ভয়াবহ রুপ দেখিয়ে পরিস্থিতি আরো জটিলতর করে তুলতে পারে বলে মনে করেন তারা। এবিষয়ে সরকারের সতর্কমূলক অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৫০
আপনার মতামত জানানঃ