পাথরে ‘লুকিয়ে’ পানিবিন্দু, হিমালয়ের মধ্যে এক মহাসাগরের ‘দেখা’ পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। আইআইএসসি এর সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্সের গবেষক প্রকাশ চন্দ্র আর্য বলেন, এই পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
মনে করা হচ্ছে ৭০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে ‘গ্লেশিয়েশন’ হয়েছে। এটিকে স্নো-বল আর্থ গ্লেশিয়েশনও বলা হচ্ছে। সেই সময়ই হিমালয়ের মধ্যকার সমুদ্রও হারিয়ে যায়।
বহু লক্ষ কোটি বছর আগে সমুদ্র থেকেই উৎপত্তি হয়েছে হিমালয়ের, এমন তথ্যই জানায় মহীখাত তত্ত্ব। বলা হয়, টার্শিয়ারি যুগে ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূ-ভাগ দুটি পরস্পরের কাছাকাছি আসতে থাকলে টেথিস সাগরে সঞ্চিত প্রস্তরীভূত পাললিক শিলাস্তরে প্রচণ্ড পার্শ্বচাপ পড়ে।
এর ফলে ওই শিলাস্তরে ভাঁজের সৃষ্টি হয় ও তা ধীরে ধীরে ওপরে উঠে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালা হিমালয়ের সৃষ্টি করে।
উল্লেখ্য, ধারণা করা হয়, বর্তমানে যে অঞ্চলটিতে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থান করছে, সেখানে আজ থেকে প্রায় সাত কোটি বছর আগে টার্সিয়ারি যুগে টেথিস নামক এক অগভীর সমুদ্র বা মহীখাত ছিল।
এই অগভীর সমুদের উত্তরে আঙ্গারাল্যান্ড নামক এবং দক্ষিণে গঙ্গোয়ানাল্যান্ড নামক বিশাল ভূখন্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। কোটি কোটি বছর ধরে এই দুটি প্রাচীন ভূখন্ড থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত পলি টেথিস মহিখাতে সঞ্চিত হতে থাকলে সেই সঞ্চিত পলির চাপে টেথিস মহিখাতে ভূ -আন্দোলনের সৃষ্টি হয়।
এই ভূ – আন্দোলনের ফলে গণ্ডোয়ানা ল্যান্ডের তলদেশে ভারতীয় পাত এবং আঙ্গারাল্যান্ড এর তলদেশের এশীয় পাত সচল হয়ে পড়ে। ভারতীয় পাতের গতিবেগ বেশি হওয়ায় তা এশীয় পাতের দক্ষিণে প্রবল আঘাত করে।
ফলে এই দুটি বিশাল ভূখন্ড এর মধ্যবর্তী স্থানে সঞ্চিত পলি প্রবল পার্শ্ব চাপের ফলে ভাঁজ খেয়ে সুবিশাল হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়। ভাঁজ প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয় বলে হিমালয় কে নবীন ভঙ্গিল পর্বতও বলা হয়।
সেই হিমালয়ের মধ্যেই এবার সমুদ্র খুঁজে পেলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।
বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স, জাপানের নিগাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা হিমালয়ের পাথরের মধ্যেও খুঁজে পেয়েছেন পানির অস্তিত্ব। মনে করা হচ্ছে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন বছর আগে এই পানি পাথরের মধ্যে সঞ্চিত হয়ে ছিল। এই আবিষ্কার থেকে এও জানা কয়েক লক্ষ কোটি বছর আগে কীভাবে পানি ‘অক্সিজেনেশনের’ মাধ্যমে থেকে গিয়েছে সেই বিজ্ঞানও।
প্রিক্যাম্ব্রিয়ান রিসার্চ পেপারে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। আইআইএসসি এর সেন্টার ফর আর্থ সায়েন্সের গবেষক প্রকাশ চন্দ্র আর্য বলেন, এই পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম কার্বোনেট প্রচুর পরিমাণে রয়েছে।
মনে করা হচ্ছে ৭০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন বছর আগে ‘গ্লেশিয়েশন’ হয়েছে। এটিকে স্নো-বল আর্থ গ্লেশিয়েশনও বলা হচ্ছে। সেই সময়ই হিমালয়ের মধ্যকার সমুদ্রও হারিয়ে যায়। তবে এখনও হিমালয়স্থিত পাথরের অভ্যন্তরে সেই চিহ্ন রয়ে গিয়েছে।
এই ভাবনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে স্নো-বল গ্লেসিয়েশনের ফলে সেডিমেন্টারি বেসিন যে অঞ্চলগুলি ছিল সেখানে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ মারাত্মকভাবে কমে যায়।
এর ফলে সেখানে ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ রেকর্ডহারে বেড়ে যায়৷ গ্লেসিয়েশনের ফলে পানি ক্রিস্টাল হয়ে গেলে সেখানে ‘বন্দি ‘ হয়ে যায় এই মৌলটি। পাথরের মধ্যে পানির আণুবীক্ষণিক যন্ত্রে ফেলে এমনটাই দেখেছেন গবেষকরা।
পশ্চিমে কুমায়ন হিমালয় অঞ্চল থেকে গঙ্গোত্রী হিমবাহ এলাকা জুড়ে এই পরীক্ষানিরীক্ষা করেন গবেষকরা। এরপর গবেষণাকক্ষে পাথর এবং পানির পরীক্ষা করতে তারা বুঝতে পারেন হিমালয়ের মধ্যেই ছিল এক মহাসমুদ্র৷
এসডব্লিউএসএস/২২২০
আপনার মতামত জানানঃ