ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবর্ষণে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। অন্যদিকে কিছু অংশে প্রয়োজনীয় বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বৃষ্টিজনিত ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, এবার নির্ধারিত সময়ের কয়েকদিন পর দেশটিতে প্রবেশ করেছে মৌসুমী বায়ু। এর জেরে কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তর ভারতের হিমাচল, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, দিল্লিতে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে।
হিমাচলের মান্ডি, উনা, হামিরপুর, বিলাসপুর, চম্বা, কাংড়া এবং কুলু, সিরমুর, কিন্নৌর, শিমলা এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ রাজ্যের নদীগুলোর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। ইরাবরতী, বিতস্তা, শতদ্রু এবং চন্দ্রভাগা নদী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সোলান উপত্যকায় রোববার ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বৃষ্টি। ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সোলানে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর বর্ষায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটেছে গুজরাটে ১০৩ জন। দেশ জুড়ে মোট ৬২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। যা গতবছরের তুলনায় ৩২ শতাংশ কম।
এ বছর রেকর্ড ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি দেখেছে হিমাচল। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত সোলান, উনার মতো এলাকায় বৃষ্টি ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। দিল্লিতে যমুনার পানি বৃদ্ধি ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীতে। এ সব অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে ছাড়তে হয়েছে বাড়িঘর।
হিমাচলে এখন পর্যন্ত ৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতবছর এই সংখ্যা ছিল ১৮৭। তবে ২০২২ সালের তুলনায় এবার হিমাচলের সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় পাঁচ গুণ।
দক্ষিণের কর্ণাটকে মারা গেছে ৮৭ জন। রাজস্থানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৬ জন। উত্তরপূর্বের আসামে মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। গতবার এই সংখ্যা ছিল ১৯৩ জন। এদিকে মেঘালয় ও মণিপুরে মারা গেছে ৮ জন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৮৯।
পূর্ব ও মধ্য ভারতে অনাবৃষ্টির কারণে গতবছরের তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা এবার কম বলে মনে করা হচ্ছে। এ বছর তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশসহ ১২টি রাজ্যে বৃষ্টির ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে ৯২ জন প্রাণ হারিয়েছেন বর্ষায়। গতবছর সংখ্যাটা ছিল ১৮৭। এ দুই রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে।
হিমাচলের আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, গত ১ জুলাই থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৪৯.৬ মিলিমিটার। যা স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় ২২৬ শতাংশ বেশি। কিন্নৌরে ৫০০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সোলানে ৪২৬ শতাংশ, সিরমুরে ৩৬৭ শতাংশ, শিমলায় ৩৬০ শতাংশ, বিলাসপুরে ৩২৫ শতাংশ, লাহুল এবং স্পিতিতে ২৩৩ শতাংশ, মান্ডিতে ১৩০ শতাংশ। দুর্যোগের কারণে হিমাচলের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে রয়েছে ৩০০ পর্যটক। রাজ্যের ৪১টি জায়গায় ধস এবং একটি জায়গায় মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস ২৪টি রাজ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে হিমাচল, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব এবং দিল্লিতে। বৃষ্টির পরিমাণ সামান্য কমবে হিমাচলে। তবে বৃষ্টি পরিমাণ বাড়বে উত্তরাখণ্ড, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে।
দিল্লিতে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানির স্তর ২০৫ মিটার ছাড়িয়ে গেছে। হরিয়ানার হাতিকুণ্ড বাঁধ থেকে পানি ছাড়ায় দিল্লির নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭১৫
আপনার মতামত জানানঃ