ইসরায়েলের প্রত্নতাত্ত্বিকরা দক্ষিণ ইস্রায়েলের নেগেভ মরুভূমির কেন্দ্রস্থলে ২,৫০০ বছর আগের কয়েক ডজন কঙ্কাল উদ্ধার করেছেন। গবেষকদের মতে, এগুলি সম্ভবত পাচার হওয়া নারীদের দেহাবশেষ – যা একটি সমাধিস্থল থেকে পাওয়া গেছে।
৯ জুন তেল আবিবে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট অফ জার্নাল তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি গবেষণা অনুসারে, দুটি বিস্তৃত সমাধি উদ্ধার হয়েছে যাতে একসাথে কমপক্ষে ৫০ টি কঙ্কাল ছিলো। এটি এমন একটি জায়গায় উদ্ধার হয়েছে যেখানে একসময়ে একটি প্রাচীন চৌরাস্তা ছিলো।
বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা সেখানে পণ্য এবং অন্যান্য সম্পদের অদলবদল করতে সেখানে আসতেন। এই অঞ্চলে পানির পাইপলাইনের জন্য একটি নির্মাণ প্রকল্পের আগে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ চলাকালীন দলটি ২০২১ সালে সমাধিগুলি খুঁজে পেয়েছিল।
সাধারণত নেগেভ-এ পাওয়া বেশির ভাগ গোলাকার কবর স্থানের বিপরীতে -(যা তুমুলি নামে পরিচিত) এই দুটি নতুন ২৩ বাই ২৩ ফুট বর্গাকার কক্ষ আবিষ্কৃত হয়েছে।
ইজরায়েল অ্যান্টিকুইটিস অথরিটির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক তথা অধ্যয়নের সহ-লেখক তালি এরিকসন-গিনি ইমেলে লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, এই ধরনের সমাধিগুলি এখনও পর্যন্ত এই অঞ্চলে কখনও আবিষ্কৃত হয়নি এবং সেগুলি কোনও ধরনের বসতির সাথে যুক্ত নয়।
গবেষণার আরেক সহ-লেখক মার্টিন ডেভিড পাস্তেরনাক সাইটটির প্রধান খননকারী ছিলেন। সমাধিগুলি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে, মিশর থেকে ওয়াদি আরাবাহ (মৃত সাগরের অববাহিকার দক্ষিণে অবস্থিত নেগেভের একটি এলাকা), দক্ষিণ জর্ডান এবং আরব উপদ্বীপ পর্যন্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন ট্র্যাকের সংযোগস্থলে অবস্থিত।
এরিকসন-গিনি বলেন, “সহিংসতা বা অসুস্থতার কারণেই হোক না কেন, কঠিন মরুভূমিতে প্রাচীন রাস্তার ধারে মৃত্যু এবং কবর দেওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। প্রাচীনকালে, ক্রসরোডগুলিকে আচার ও ধর্মীয় গুরুত্ব সহ পবিত্র স্থান হিসাবে দেখা হত।”
সমাধিটিতে দক্ষিণ লেভান্ট (পূর্ব ভূমধ্যসাগরের আশেপাশের অঞ্চল), দক্ষিণ আরব এবং মিশর জুড়ে বিভিন্ন সংস্কৃতির নিদর্শন রয়েছে।
মনে করা হচ্ছে এটি লৌহ যুগের শেষের দিকে এবং পার্সিয়ান অ্যাকেমেনিড সময়কালের (খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দী থেকে পঞ্চম শতাব্দী)।
গবেষকরা বলছেন,কিছু বস্তু ইঙ্গিত দেয় যে সাইটে আবিষ্কৃত মানুষের দেহাবশেষ প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ছিল।
যদিও এটি নিশ্চিত করার জন্য আরও বিশ্লেষণ প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা। উদাহরণস্বরূপ, সমাধিগুলিতে তামা এবং লোহার গয়না, সিরামিক ফুলদানি এবং লোহিত সাগরের সাইপ্রিয়ার শেল রয়েছে, যা মিশরীয় নারীরা কখনও কখনও তাবিজ হিসাবে ব্যবহার করত। বস্তুগুলি সৌভাগ্য আনতে ব্যবহৃত হত।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা এখানে ধূপের পাত্র পেয়েছেন। কিছু ধূপের পাত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ভাঙ্গা হয়েছিল, সম্ভবত একটি দাফন অনুষ্ঠানের অংশ ছিলো এটি। সমাধিগুলি এই অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ শূন্যস্থান পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে।
আর্জেন্টিনার পন্টিফিকাল ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির একজন ইতিহাসবিদ জুয়ান ম্যানুয়েল টেবেস ইমেলে লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, “আমরা খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ আরব এবং দক্ষিণ লেভান্টের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানি, কিন্তু আমাদের হাতে বেশিরভাগক্ষেত্রে প্রমাণ নেই। এই খননকার্য প্রাচীন বাণিজ্য নেটওয়ার্ক সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত করছে।”
গবেষণার লেখকরা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে মানব দেহাবশেষগুলি পাচার হওয়া নারীদের হতে পারে যাদের গাজা বা মিশর থেকে আনা হয়েছিলো। এখানে সম্ভবত তাদের বিক্রি করা হয়েছিল, যারা আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল।
ইয়েমেনে পাওয়া মিনিয়ান শিলালিপি সহ প্রাচীন রেকর্ডগুলি এই অঞ্চলে ধর্মীয় পতিতাবৃত্তির জন্য নারীদের পাচারের অনুশীলন নথিভুক্ত রয়েছে। সমাধিগুলি থেকে জানা যায় যে, সাইটটি দীর্ঘকাল ধরে দাফনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ইসরায়েলি নিউজ সাইট হারেৎজ অনুসারে, সমাধিস্থলটি সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার করা হয়েছে যাতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা এটি নিয়ে অধ্যয়ন চালিয়ে যেতে পারেন।
এসডব্লিউএসএস১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ