দুই দিনের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। মূলত বাজেটের ঋণ সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পাওয়া ৫০৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে যোগ হয়েছে। ফলে তা বেড়ে বর্তমানে অবস্থান করছে ৩ হাজার ৩৬ কোটি ডলারে।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে নিচে নেমে আসার দুই দিনের মধ্যে আবার তা বেড়েছে এবং এখন ৩ হাজার ৩৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, আকুর বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল, কিন্তু বিদেশ থেকে ডলার আসায় রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ছাড়িয়েছে।
সম্প্রতি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের ১১৮ কোটি ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৮৩ কোটি ডলার। এরপর আবার কিছু ঋণ ও অনুদানের অর্থ দেশে আসে। ফলে রিজার্ভ আবার ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
করোনার পরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিলো। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে আবারও সংকট দেখা দেয়। এর প্রভাবে ২০২২ সালের মার্চ থেকে দেশের আর্থিক খাতে ডলার সংকট দেখা দেয়। চাপ সামাল দিতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৯২৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। এরফলে আবারও রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আগের কার্যদিবসে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ১৫ জুন রিজার্ভ ছিলো ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। সম্প্রতি এডিবির বাজেট সহায়তার ৪০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া গেছে ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। সম্প্রতি আরও কিছু ঋণ পাওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ বেড়েছে। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। তবে কমতে কমতে গত ৮ মে তা ৩০ বিলিয়নের নিচে নামে।
এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। এর ফলে গত এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না আসা, নতুন বাণিজ্য ঋণ কমে যাওয়া এবং আগে নেওয়া ঋণ পরিশোধের চাপে ডলার সংকট দ্রুত কাটছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার বিক্রি করেছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে চলতি জুন মাসে রেমিট্যন্স আসায় ব্যাপক উত্থান হয়েছে। সদ্য বিদায়ী জুনের প্রথম ২৫ দিনে প্রবাসীরা ২০২ কোটি ডলার পাঠিয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে জুনের ২৫ জুন পর্যন্ত ২ হাজার ১০২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যার পরিমাণ এর আগের অর্থবছরের পুরো সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। গত বছর একই সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার।
তবে বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ মানতে চায় না। রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে ধার; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেয়া বাবদ খরচ ৮২০ কোটি ডলার রয়েছে, যা এখন ৬০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
তবে মুদ্রানীতিতে আইএমএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান যে পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করে, তা মেনে চলার ঘোষণা দেয়া হয়। অর্থাৎ দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করবে না।
ডলারের দর হু হু করে বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকগুলো কেনা ও বিক্রির সর্বোচ্চ দর ঠিক করে দিচ্ছে। যদিও অনেক ব্যাংক নির্ধারিত দরের বেশিতে ডলার কিনছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে কয়েক দফা সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ গত ২১ মে বিএফআইইউ ৭টি ব্যাংকের রেমিট্যান্স-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিয়ে বৈঠক করে। এরপর এখনও অনেক ব্যাংক নির্ধারিত দর মানছে না। অনেক ব্যাংক বেশি পরিমাণ টাকা খরচ করে ডলার ক্রয় করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদুল আজহার আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছিলো। এরফলে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে রেমিট্যান্সের অবদান রয়েছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ২৫ জুন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার।
এডব্লিউ/এসএস/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ