পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৬৩৭০ কিলোমিটার। এই দূরত্ব এতটাই গভীর যে মানুষের পক্ষে এই গভীরতায় প্রবেশ করা সম্ভব নয়। বলতে গেলে এই গভীরতার ০.১%ও মানুষ অতিক্রম করতে পারেনি।
মানুষ মাটির নিচে প্রবেশ করতে চায় মূলত দুটি কারণে। প্রথমত মাটির নীচে থেকে খনিজ সম্পদ সংগ্রহ করার জন্য। এই মুহূর্তে পৃথিবীর গভীরতম খনি রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, এমপোনেং স্বর্ণখনি, যা মাটির নিচে প্রায় ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে আরও অবাক করা বিষয় এবার সামনে এসেছে।
পৃথিবীর গভীরে মাউন্ট এভারেস্টের চেয়েও তিন থেকে চার গুণ উঁচু পর্বতের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
অ্যান্টার্কটিকার সিসমোলজি কেন্দ্রগুলি ব্যবহার করে, বিশেষজ্ঞরা এই আশ্চর্যজনকভাবে বিশাল পর্বত খুঁজে পেয়েছেন ভূগর্ভের কোর এবং ম্যান্টেলের সীমানায় প্রায় ১৮০০ মাইল গভীরে (প্রায় ২৯০০ কিলোমিটার) এটি রয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, আল্ট্রা-লো ভেলোসিটি জোন (ULVZ) নামে অভিহিত করা হয়েছে অঞ্চলটিকে। এই বিশাল ভূগর্ভস্থ পর্বতশ্রেণীগুলি এত বছর বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি এড়াতে সক্ষম হয়েছিল যতক্ষণ না ভূমিকম্প এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণগুলি পর্যাপ্ত সিসমিক ডেটা মারফত সামনে আসে।
মাউন্ট এভারেস্ট ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫.৫ মাইল (৮.৮ কিলোমিটার) উচ্চতায় অবস্থিত, যেখানে ভূগর্ভস্থ পর্বতগুলির উচ্চতা ২৪ মাইল (৩৮ কিলোমিটার) বেশি বলে বলা হয়। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জিওফিজিসিস্ট এডওয়ার্ড গার্নেরো একটি বিবৃতিতে বলেছেন -”অ্যান্টার্কটিকা থেকে ১০০০ এর সিসমিক রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে, আমাদের হাই-ডেফিনিশন ইমেজিং পদ্ধতি CMB [কোর-ম্যান্টল বাউন্ডারি] মারফত আমরা অনুসন্ধান করেছি সেখানে ভূগর্ভে এই অস্বাভাবিক অঞ্চল খুঁজে পাওয়া গেছে।
কোথাও কোথাও বস্তুর পুরুত্ব কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি ইঙ্গিত করে যে আমরা মূল অংশে পর্বত দেখছি, কিছু জায়গায় মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে ৫ গুণ পর্যন্ত উঁচু।” বিজ্ঞানীদের দ্বারা প্রদত্ত একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হল যে এই প্রাচীন গঠনগুলি যখন তৈরি হয়েছিল তখন সেখানে সমুদ্র ছিলো।
টেকটোনিক প্লেটগুলির অবস্থান পরিবর্তন এই গঠনের জন্য দায়ী। সমুদ্রের তল থেকে বেসাল্ট শিলা এবং পলির সংমিশ্রণ, তীব্র তাপ এবং চাপ দ্বারা পর্বতে রূপান্তরিত হয়। এই বৈজ্ঞানিক অধ্যয়নটি যুক্তি দেয় যে এই ভূগর্ভস্থ শিখরগুলি কীভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এসডব্লিউএসএস২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ