ভারতের ওডিশা রাজ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি। ট্রেনের ভেতরে এখনো অনেকে আটকা পড়ে আছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওডিশার বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ভারতের রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কলকাতাগামী বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনটি বাহাঙ্গাবাজার এলাকায় লাইনচ্যুত হয়ে পড়েছিল। চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওই এলাকা পেরিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত ট্রেনের বগির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনা ঘটে। করমন্ডল এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগি ঘটনাস্থলে একটি মালবাহী ট্রেনের বগির ওপরও আছড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে নেমেছেন ভারতের ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরা। রয়েছে ওডিশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সও (ওডিআরএএফ)। উদ্ধারকাজে ভারতের বিমানবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
শুক্রবারের এই রেল দুর্ঘটনাটিকে ভারতে বিগত বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। বছর দশেক আগে ২০১৩ সালে করমন্ডল এক্সপ্রেসের ওডিশার জাজপুর জেলায় দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। এবারের দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেটি ছিল মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে।
দুর্ঘটনা কবলিত করমন্ডল এক্সপ্রেস শুক্রবারেই কলকাতা ছেড়ে এসেছিল। ট্রেনটির যাত্রীদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গে বাসিন্দা। বিভিন্ন কাজে ও উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে তারা তামিলনাড়ু রাজ্যে যান।
দুর্ঘটনার খবরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি টুইট করে বলেছেন, ‘ওডিশায় ট্রেন দুর্ঘটনায় আমি মর্মাহত। এই দুঃসময়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহত ব্যক্তিরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। পরিস্থিতি নিয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও কথা বলেছি।’
Distressed by the train accident in Odisha. In this hour of grief, my thoughts are with the bereaved families. May the injured recover soon. Spoke to Railway Minister @AshwiniVaishnaw and took stock of the situation. Rescue ops are underway at the site of the mishap and all…
— Narendra Modi (@narendramodi) June 2, 2023
দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মোদি। পাশাপাশি আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। এ ছাড়া নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি ও গুরুতর আহতদের ২ লাখ রুপি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।
ভারতের ওডিশা রাজ্যের বাসিন্দা অশোক সামাল। থাকেন বালাসোর জেলার বাহাঙ্গাবাজার গ্রামে। আর দশ দিনের মতোই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রেললাইনের কাছ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ বিকট শব্দ। রেললাইন ধরে দৌড়ে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন বীভৎস এক দৃশ্য। দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে ট্রেনের একাধিক বগি।
শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়েছিলেন বাহাঙ্গাবাজার গ্রামের আরও অনেকে। অশোক তাঁদেরই একজন। তিনি বললেন, ‘সেখান থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। সব জায়গায় ছিল রক্ত। বগির মধ্যে আটকে পড়া লোকজন সাহায্য চাইছিলেন। দেখলাম, উল্টে যাওয়া অনেক বগির নিচেও মানুষ চাপা পড়েছে।’
দুর্ঘটনাকবলিত করমন্ডল এক্সপ্রেসের বগি থেকে যাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের একজন গোবিন্দ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ট্রেনটি ধাক্কা খেল। আমি যে বগিতে ছিলাম, সেটি তীব্র গতিতে লাইনচ্যুত হয়ে গেল। এরপর সেটি মাটির ওপর দিয়ে বেশ কিছুদূর গিয়ে থামল।’
এ সময় গোবিন্দ দেখতে পান বগিতে তাঁর পাশের জানালার শিক ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, ‘কেউ একজন জানালার শিক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল। আর আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম।’ গোবিন্দ যে বগিতে ছিলেন, সেটির বেশির ভাগ যাত্রীকে উদ্ধার করেছেন অশোক সামালের মতো স্থানীয় লোকজনেরাই। দুর্ঘটনার পর তাঁরাই প্রথম সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন।
‘ট্রেনটি লাইনচ্যুত হলে আমার ঘুম ভেঙে যায়। আমার ওপর ১০-১৫ জন ছিটকে এসে পড়ল। আমি ঘাড়ে ও হাতে আঘাত পেলাম। যখন ট্রেনের বাইরে বের হলাম, দেখলাম চারপাশে মানুষের অঙ্গ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এখানে একটি হাত পড়ে আছে, তো ওখানে একটি পা। একজনের চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে।’
কথাগুলো বলছিলেন ভারতের কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেসের এক যাত্রী।
এসডব্লিউ/এসএস/১০৩০
আপনার মতামত জানানঃ